বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম নির্ধারনে দুই মাস লাগবে

বিদ্যুৎ গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারনে পর্যালোচনা চলছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই মাস লাগবে। গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়বে নাকি আগের দামেই থাকবে তা আরও পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছে।
বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ বলেন, আইন অনুযায়ি শুনানী পর্যালোচনা শেষে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে কিনা অথবা দাম আদৌ বাড়বে কিনা অথবা দাম কমানো হবে কিনা তার কোনটাই এখন বলা সম্ভব নয়।
গত ২০ থেকে ২৫ জানুয়ারি দেশের পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানী করেছে বিইআরসি। শুনানীতে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি জানিয়েছে, বিতরণ পর্যায়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বিদ্যুতের দাম কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) লাভ করছে। এসব কোম্পানির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া পাইকারি ও সঞ্চালনে দাম না বাড়ালে কোনো কোম্পানিরই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। পিডিবির তিন দশমিক ০৯ ভাগ এবং ওজোপাডিকোর ২ দুই ২৮ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করে মূল্যায়ন কমিটি।
বিদ্যুতের পরে দুই থেকে পাঁচ ফেব্র“য়ারি গ্যাসের সঞ্চালন হার এবং দাম বাড়নোর প্রস্তাবের ওপর গণশুণানী করে বিইআরসি। সেখানেও বিদ্যুতের মতো অবস্থা। বেশিরভাগ কোম্পানিই লাভ করছে, দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করে বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) এর সঞ্চালন হার এখনই বেশি। ফলে চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করে মূল্যায়ন কমিটি। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস গ্যাস), কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লাভ করছে। তাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে সঞ্চালন খরচ বাড়ানো হলে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির পাঁচ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দুই দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (জেজিটিডিএসএল) চার দশমিক ৯৮ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন হবে।
ভবিষ্যতে গ্যাস আমদানি করলে খরচ বাড়বে’ এই অজুহাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। দাম বাড়ানোর যুক্তিতে বলা হয়েছে, সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া বিদেশি গ্যাস কোম্পানি থেকে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে লোকসান হচ্ছে। এজন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ক্যাবের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ভোক্তার স্বার্থে সরকারের ভর্তুকি দিলে হলেও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। বিদ্যুতের দাম সামান্য বাড়লে প্রভাব অনেক বেশি পড়ে। বাড়ির মালিক দ্বিগুণ বিল আদায় করেন। সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এমনকি বাস ভাড়া পর্যন্ত বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৭০ শতাংশ কমে গেছে। সে কারণে বিপিসি অনেক মুনাফা করছে। হয় তেলের দাম কমানো হোক, না হয় তেলের টাকা এনে বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া উচিত। শামসুল আলম বলেন, গণশুনানিতে বেশিরভাগ কোম্পানির দেয়া তথ্য অনুযায়ি তারা লাভ করছে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লেও অনেকে লাভেই থাকবে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
গ্যাসের দামের বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, খুচরা পর্যায়ে গ্যাসের সঠিক দাম নির্ধারণের জন্য গ্যাসের একটি সঠিক পাইকারি দাম নির্ধারণ করা জরুরী। প্রথমেই বিইআরসির উচিত কূপমুখে গ্যাসের একটি দাম নির্ধারণ করা। এবারের শুনানির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া প্রস্তাবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি সম্পদমূল্য হিসেবে গ্যাসের দাম ২৫ টাকা করার কারণ জানতে চেয়ে তিনি বলেন, সরকার একটা রয়্যালটি পায়। তারপর আবার সম্পদমূল্য কেন এবং তা ২৫ টাকা কেন, তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না। কোনো কোম্পানিই দাম বাড়ানোর সঠিক যুক্তি দেখাতে পারেনি।