দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:

টানা দাবদাহের মধ্যে দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় পারদ উঠেছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমে ঢাকায় সর্বোচ্চ।

গত বছর ১৭ এপ্রিলও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তার আগে ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়, যা দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

আর ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ওঠে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

ঢাকায় এ মৌসুমে গত ২০ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল তাপমাত্রা। আর গত বছরের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তার আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকায় পারদ উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চলতি মৌসুমে টানা ৩০ দিন ধরে চলা দাবদাহ আরো কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মে মাসের ২ তারিখ বা তার পরে দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এলাকা বিশেষ করে ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

“সে সময় এসব এলাকার চলমান তাপপ্রবাহ প্রশমিত হবে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী অঞ্চলের চলমান তাপপ্রবাহ আরও অব্যাহত থাকবে। ৪-৫ তারিখের দিকে এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি জানান, এর আগে ২০১৪ সালে ৫-৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল। ২০১৬ সালে ৬-৩০ এপ্রিল টানা ২৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।”

বাংলাদেশে মে মাসেও গরমের দাপট যে বেশি থাকে, সে কথা তুলে ধরে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের (এনএওএমআই) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, “জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।”