ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি বাংলাদেশের বিদ্যুতে বিনিয়োগ করবে

ভারতীয় বেসরকারি একাধিক কো¤ক্সানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া বাংলাদেশের বেসরকারি কোম্পানির সাথে যৌথভাবেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্পর্কিত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির নবম সভায় এই বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে এই আলোচনা হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম এবং ভারতের পক্ষে ভারতের বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার সিন্হা।

বৈঠক শেষে উভয় বিদ্যুৎ সচিব উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিনিময়ে আরও অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রায় এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। আর পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। নেপাল ও ভূটান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আনলে ভারত সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশে ভারতরে রিলায়েন্স, আদভানিসহ বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক বলে জানানো হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবে, আইনসহ বিভিল্পু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, ভারতীয় যে কোন বেসরকারি কোম্পানি এককভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। এছাড়া যৌথভাবেও করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে তৃতীয় কোন দেশে বিনিয়োগ করতে পারে।

সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাত সংক্রান্ত চলমান সকল প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সভায় বহরমপুর (ভারত)-ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) গ্রিড আন্ঃসংযোগ এর ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, বহরমপুর-ভেড়ামারা বিদ্যমান লাইনের মাধ্যমে ভারতের বিদ্যুৎ বাজার থেকে আরও ৩০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চ ক্ষমতার মাল্টি টার্মিনাল এইচভিডিসি বাই-পোল সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের  অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এরমধ্যে নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আমদানি করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।

সভায় রামপালে বাংলাদেশ-ভারত ফেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানীর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রর আশপাশের উন্নয়নের জন্য ১৫ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে খরচ করা হবে।

এছাড়াও সভায় নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানীর বিষয়ে আলোচনা হয়।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয় হবে কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটো এক সাথেই চলবে। এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। কক্সবাজারে রামপালের মত আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলা হয়, এটি পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে।

গত বছর অক্টোবরে দিল্লীতে বিদ্যুৎ খাত সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ৮ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাংলাদেশের পক্ষে অন্যদের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন, পিডিবি’র চেয়ারম্যাস, পিডিসিজি ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিস্টরা উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে যুগ্ম সচিব জ্যোতি অরোরা, পরিচালক ঘনশাম প্রসাদ, সেন্টাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিথি (সিইএ) এর পরিচালক রবীন্দ্র গুপ্ত, ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনটিপিসি) পরিচালক  আই জে কাপুর, পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইণ্ডিয়া লিমিটেডের (পিজিসিআইএল) পরিচালক আই এস ঝা, এজিএম অশোক পাল, এনটিপিসির এজিএম পারভিন সাকসেনা উপস্থিত ছিলেন।