মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেল জাপানের সুমিতমো

…..

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে জাপানের সুমিতমো কনসোর্টিয়ামকে নির্বাচন করা হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি জাইকার অনাপত্তির পর কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি নোটিস অব এ্যাওয়ার্ড ইস্যু করেছে। কনসোর্টিয়ামটি প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকায় এ কাজ পেয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে এ দর খানিকটা বেশি। সুমিতমো কর্পোরেশনের কনসোর্টিয়ামে তসিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশন রয়েছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, আগামী মাসেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন চুক্তি হবে।

মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে একটি কয়লা বন্দর, কয়লা রাখার জন্য ইয়ার্ড এবং কয়লা পরিবহন সুবিধার জন্য সাত কিলোমিটারের একটি চ্যানেল খনন করা হবে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোর পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থাও নির্মাণ করা হবে। মহেশখালী এলাকায় নির্মাণ করা অন্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রও এ বন্দর ব্যবহার করবে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম এ প্রসঙ্গে বলেন, সুমিতমোকে কাজ পাওয়ার বিষয়টি আমরা জানিয়েছি। ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এখানে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, একটি কয়লা বন্দরও নির্মাণ করা হবে। সঙ্গত কারণে ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে যারা আলোচনা করছে, তারা না জেনেই কথা বলছে। তবে নতুন করে কিছু কাজ যোগ হওয়ায় খানিকটা ব্যয় বেড়েছে।

নিয়মানুযায়ী আগামী ২১ দিনের মধ্যে সুমিতমো কনসোর্টিয়ামকে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি জমা দিতে হবে, যা মোট চুক্তি মূল্যের ১০ শতাংশ। এরপর কোম্পনিটির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে। আগামী মাসেই চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আশাবাদী ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম।

প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে বলা হয়, পর্যালোচনার পর অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল কয়লা উন্মুক্ত স্থানে রাখা হবে। পরে কয়লা রাখার স্থানটিকে ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় বেড়েছে। ঠিকাদারি কোম্পানিকে প্রথম চার মাসের কয়লা সরবরাহের শর্ত দেয়া হয়েছে, যেটা প্রাথমিক প্রস্তাবে ছিল না। এতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় বেড়েছে।

উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ঋণে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দর প্রস্তাব জমার দেয়ার আগেই গত বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আটজন জাপানী নাগরিক নিহতের পর ঠিকাদাররা এ দেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তির কথা জানায়। সরকার এ সময় নানাভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করলেও আস্থা অর্জনে অনেকটা সময় কেটে যায়। পরে সরকারের কঠোর জঙ্গীবিরোধী অবস্থানে আবার আস্থা ফেরে জাপানের। তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং জাইকা শুরু থেকেই এ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল।

এরমধ্যে ঠিকাদারদের অনুরোধে দর প্রস্তাব জমার সময় কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো গত জানুয়ারিতে দর প্রস্তাব জমা দেয়। দরপত্রে অংশ নেয় জাপানী দুই প্রতিষ্ঠান।

সুমিতমো কনসোর্টিয়ামের পাশাপাশি মারুবিনি কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় গত ২২ মার্চ উভয় কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়। মারুবিনি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মিতসুবিশি, হিটাচি পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড ও টিওএ কর্পোরেশন ছিল।

আর্থিক প্রস্তাবে সুমিতমো কর্পোরেশন চার দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার এবং মারুবিনি কর্পোরেশন তিন দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার দর দেয়। কিন্তু প্রকল্পে কাজ পাচ্ছে সুমিতমো। এ প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, প্রস্তাব মূল্যায়নের পর দুই প্রতিষ্ঠানের দরই বেড়ে গেছে। তবে মারুবিনির দরমূল্য প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়, যা সুমিতমোর চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি ডলার বেশি হয়েছে। সঙ্গত কারণে সুমিতমোকেই কাজ দেয়া হয়েছে।

গত ৬ জুলাই জাইকা দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত জানায়। এরপর গত সপ্তাহে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির বৈঠকে আর্থিক প্রস্তাব অনুমোদনের পর সুমিতমোকে কাজ দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়।

সম্প্রতি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ঋণের অর্থ প্রদানের জন্য জাইকার সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। প্রথম কিস্তিতে প্রায় ৫৫ লাখ ডলার বাংলাদেশী টাকায় ৭৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পটিতে জাপান ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে। প্রকল্পটি বিদ্যুৎ বিভাগের নেয়া এককভাবে সব থেকে বেশি অর্থমূল্যের।
সৌজন্যে: জনকণ্ঠ