কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় ক্ষতি থেকে দ্রুত উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মনিটরিং আরো জোরদার করতে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় মংলা- ঘাষিয়াখালী চ্যানেলটি চালু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
সোমবার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন।সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী একইভাবে গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবন এলাকায় শ্যালা নদীতে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলসহ তেলবাহী ট্যাঙ্কার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার ৭’ ডুবে যায়। এতে সুন্দরবন এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টা আরো ভালোভাবে মনিটরিং করা দরকার। এ তেল সরানোর পাশাপাশি এখানে যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে একটি তেলের ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় সেখানে তেল ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ঠিক সেখানকার স্থানীয় লোকজন তেল সংগ্রহ করছেন। এটা বেশ কার্যকর পদ্ধতি, সেখানে লোকজন উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে। আমি আশা করি, এটি কার্যকর হবে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়টি দেখতে হবে।
এদিকে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে খনন করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দরে আসার জন্য ঘাষিয়া খাল ছিলো। সেই ঘাষিয়া খালটি দিয়েই কিন্তু সব সময় নৌকা চলাচল করতো। ২০০১ সালে বিএনপি আসার পর মংলা বন্দর বন্ধ করে দেয়। মংলা বন্দরে কোনো জাহাজ আসতোই না। ফলে ঘাষিয়া খালটির আর কোনো গুরুত্বও ছিলো না। যার জন্য দীর্ঘদিন এটির ড্রেজিং হয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ঘাষিয়া খালটি ধীরে ধীরে সিল্ড হয়ে যায়।
ঘাষিয়া খালের সঙ্গে যুক্ত শাখা খালের মুখ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি এখানকার চিংড়ি ঘেরগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালটি খনন করতে হবে। একই সঙ্গে ঘের দিয়ে বন্ধ থাকা শাখা খালগুলোর মুখ খুলে দিতে হবে। তাতে যারাই ঘের করুক তা সরিয়ে দিতে হবে। পানির আসার পথ চালু রাখতে হবে।
তিনি বলেন,  বিভিন্ন জায়গায় ঘাষিয়া খালে পানি আসার ছোট ছোট শাখা খালগুলো খাল বন্ধ হয়ে গেছে। ওখানে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে। একটা সার্ভে করে দেখতে হবে কোন কোন এলাকায় এই চিংড়ি ঘের করার কারণে খালে পানি আসাটা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘেরগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বা খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে তা খুলে দিতে হবে।ঘাষিয়া খাল চালু হলে মংলা বন্দরে যেতে পথ ৭/৮ মাইল কমে যাবে বলেও উল্লেখ করে তিনি।
এ সময় খুলনার বিভাগীয় কমিশনার সুন্দরবনে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় তেল অপসারণে জোরালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সোমবার থেকে সুন্দরবনে আরো বেশি লোক লাগিয়েছি, আরো নৌকা নামানো হয়েছে। সেখানে আরো বেশি তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। গতকাল (রোববার) পর্যন্ত ৪০ হাজার ২০০ লিটার তেল সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঘাষিয়া খাল খননের বিষয়েও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে খুলনার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে কথা বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত থেকে যাতে ভেজাল সার আসতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যশোরের জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
যশোরের জেলা প্রশাসক সম্প্রতি ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথসভার সফলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।এ উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে মাদক, চোরাচালন, নারী ও শিশুপাচার বন্ধে কার্যকর হবে বলে মনে করি।
এ বৈঠকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ অপরাধ করে ভারতে কিংবা ভারতে অপরাধ করে কেউ বাংলাদেশ আশ্রয় নিতে না পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।
এ সময় যশোরের জেলা পুলিশ সুপারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। যশোরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে।প্রধানমন্ত্রী কপোতাক্ষ নদীর ড্রেজিং যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নেন।গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান গোপালগঞ্জের মানুষের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও সামাজিক উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন।গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ এলাকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই সেসব এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তিনি।সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।গোপালগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, এমনভাবে কাজ করতে হবে, যেন জনগণ পুলিশকে বন্ধু মনে করে।
গোপালগঞ্জের কর্মকর্তাদের এ জেলায় শামুক চাষের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিংড়ির খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে শামুক ব্যবহৃত হচ্ছে। চিংড়ি ঘেরের জন্য সব শামুক সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খাল-বিল শামুকশূন্য হয়ে যাবে। ইকো ব্যালেন্স নষ্ট হবে।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে চিংড়ি ঘেরের জন্য আমাদের আলাদাভাবে শামুক চাষ করা লাগতে পারে।
দেশের উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে চাই। এজন্য আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি। এখন দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক চার শতাংশ। আমাদের এ মেয়াদে আরো অন্তত ১০ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কমাতে চাই।
ভিডিও কনফারেন্সের সময় সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেন ভূইঞাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।