এখন অকটেনে লিটারে ২৫ টাকা লাভ আর ডিজেলে ৬টাকা লোকসান

বিপিসি চেয়ারম্যান সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দাম বাড়ানোর পর বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতিলিটার অকটেন বিক্রিতে ২৫ টাকা লাভ আর ডিজেলে ৬টাকা লোকসান। লাভ লোকসান মিলিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাসে ২০৫ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
বুধবার বিপিসির লিঁয়াজো অফিসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এ তথ্য জানান।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের দর যদি অপরিবর্তিত থাকে আর গত মাসের মতো যদি জ্বালানি তেল বিক্রি হয় আর আন্তর্জাতিক বাজারে একই দাম থাকে তবে মাসে মুনাফা হবে ২০৫ কোটি টাকা।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেলে দাম কমানোর হবে।
বর্তমানে ৩০ দিনের ডিজেল আর ১৯ দিনের পেট্রল অকটেন মজুদ আছে। প্রয়োজনীয় তেল জাহাজে আসছে। জ্বালানি তেলের কোন সংকট নেই বলে তিনি জানান।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী তখন কেন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন- এ প্রশ্নে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, প্লাটসের (জ্বালানি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান) হিসাবে, পহেলা আগস্ট প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১৩২ ডলার ৭৩ সেন্ট। কমে সেটা ৮ অগাস্ট ১১৮ ডলার ৫০ সেন্ট। গড়ে ১২৬ ডলার ৫৯ সেন্ট। এর সঙ্গে প্রতি ব্যারেলে ১১ ডলার প্রিমিয়াম, ট্যাক্স-ভ্যাট, ডিলার কমিশন যোগ হবে। এই আটদিনের তথ্যেৃ ছয় তারিখে যখন মূল্য নির্ধারিত হয়, তখন গত জুলাই মাসের গড় হিসাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আটদিনের গড় হিসাব ধরলে আমার প্রতি লিটার (ডিজেল) পড়ে ১২০ টাকা ১৬ পয়সা। এই হিসাবে আমাদের এখনও ৬ টাকা লোকসান আছে। পেট্রোল ও অকটেনে লাভ কত হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আট দিনের গড় যদি করি, ২৫ টাকার মতো লাভ থাকছে অকটেনে। যেহেতু পেট্রোল ৫ টাকা কম রাখছি। সেহেতু কিছুটা কম হলেও হতে পারে।
দেশে অবশ্য জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেলের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের ৬৩ লাখ মেট্রিক টন তেল বিক্রি করেছে বিপিসি। এর মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশই ডিজেল। অকটেন ৫ শতাংশ এবং পেট্রোল ৬ শতাংশের মতো।
চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যৎ মুনাফা নিয়ে আজাদ বলেন, যদি ডিজেল ও অকটেন জুলাই মাসের পরিমাণই বিক্রি হয়, তাহলে ডলারের সরকারি হিসাব হলে আমার ২০৫ কোটি টাকা মুনাফা থাকবে মাসে। আর যদি ডলার এখনকার মার্কেট রেটে যায়, তাহলে আমার লোকসান হয়ে যায় ৩৯ কোটি টাকা।
আপনারাই ব্রিফিং করেছেন, পেট্রোল-অকটেন আমাদের নিজস্ব পণ্য, তারপরও দাম বাড়াতে হলো কেন Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেট্রোল জিনিসটাও কিন্তু ক্রুড অয়েল থেকে তৈরি হয়। পেট্রোল সেটা প্রাইভেট সাপ্লাই তারা দেয়, আর আমাদের ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে তৈরি হয়। এটার পেছনে যে খরচ, সেটা ক্রুড অয়েল। ক্রুড অয়েল আমদানির সঙ্গে ট্যাক্স, ভ্যাট সব দিয়ে আমাকে আমদানি করতে হয়। এটা প্রায় কাছাকাছি খরচ পড়ে। পেট্রোল-অকটেন কাছাকাছি মূল্যে বিক্রি করতে হয়। কারণ দামের বেশি হেরফের হলে একটাকে অন্যটা বলে চালিয়ে দেয়। এটা অতীতে হয়েছে। ক্রুড অয়েল কিন্তু স্থানীয়ভাবে হয় না। যেখানেই করেন ক্রুড অয়েল তো আনতে হয়।
গত কয়েকমাসের লোকসান মেটাতে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যে এফডিআর ছিল তা ভাঙিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে জানিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে চলতি হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এই খাত থেকে আমদানির খরচ মেটানো হয়। গত জুন মাসে ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা এবং জুলাইয়ে আমদানির বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ১০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। আগস্টে আমদানি বিল প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, ৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এই খাতে ২ মাসের আমদানির সমমূল্যের অর্থ রাখতে হয় নিরাপত্তার জন্য। সে হিসাবে ২০ হাজার কোটি টাকা থাকা উচিত, কিন্তু এখন সে পরিমাণ অর্থ নেই। তাই এফডিআর ভেঙে তেলের দাম দিতে হচ্ছে। বিপিসির ব্যাংক হিসাবে ফরেন কারেন্সি ও প্রকল্পের সিডি হিসাবে ২৮৬ কোটি ৭১ লাখ, শেয়ার অফলোড/রিজার্ভ ফান্ডে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ৮৭ লাখ, উন্নয়ন তহবিলে ৩৭২ কোটি, অবচয় তহবিলে ৮৬ কোটি ২১ লাখ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে রয়েছে ১০ হাজার ৭১৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার স্থিতি রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকে জমা রয়েছে ১৯ হাজার ৮৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি যে ৪২ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, এরমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়, সরকারকে লভ্যাংশ ও উদ্বৃত্ত তহবিল হিসেবে দেওয়া, এনবিআরের বকেয়া পরিশোধ, মূলধনী বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। অবশিষ্ট থাকে ২২ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী, বিপিসির লোকসান প্রায় ৫ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর হতে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর এই ১৪ বছরে বিপিসির লোকসান হয় ৫৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিপিসিকে দেয় ৪৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। বাকি ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা বিপিসির মুনাফার সঙ্গে সমম্বয় করা হয়।