রামপাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ রাজস্ব সুবিধা চাই: এনবিআর’র না

প্রচলিত কর সুবিধার চেয়ে বাড়তি চায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রর যন্ত্র নয় সাথে অন্যান্য কর সুবিধাও চায় তারা। তবে এই সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকারী কোম্পানি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেণ্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসি) এনবিআরএ চিঠি দিয়ে এই সুবিধা চেয়েছে। এনবিআর সেই চিঠির প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, প্রচলিত সুবিধা বেশি দিলে অন্য সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও দিতে হবে। যা ঠিক হবে না।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতকে বিশেষ সুবিধা দিতে এখনই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সকল যন্ত্র আমদানিতে কর মওকুফ করা হয়। এই সুবিধা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে সকল কোম্পানি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পেয়ে থাকে। কিন্তু বিএনএফপিসি এই সুবিধার বাড়তি চায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মুসক/ভ্যাট) এখনই মওকুফ করা আছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যও কর সুবিধা রয়েছে। এর ওপর আবার নতুন করে রাজস্ব ছাড় চায় প্রতিষ্ঠানটি।  তারা চাকরিজীবিদের ব্যক্তিগত আয়ের কর মুওকুফসহ কোনো ধরনের ভ্যাট দিতে চায় না।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে কোম্পানিতে চাকরি করা ভারতীয় কর্মকর্তা কর্তাচারিদের বিশেষ সুবিধা আগে থেকেই দেয়া আছে। চুক্তির সময় বিশেষ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এখন এ ছাড়াও সুবিধা চাইছে তারা।

বিআইএফপিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুবিধা দেয়া না দেয়ার ক্ষমতা এনবিআর এর। যদি এই সুবিধা দেয় তবে বাংলাদেশের মানুষ লাভবান হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমবে। তখন কম টাকায় বিদ্যুৎ কিরতে পারবে পিডিবি। তিনি বলেন, দুই দেশের সরকার প্রধানের সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। একেন্দ্রর বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছে বিক্রি হবে। সেখানে যদি বিভিন্ন কর আরোপ করা হয়, তাহলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। আর এনবিআর থেকে বিশেষ ছাড় দিলে তুলনামূলক কম দামে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাবে। এসব বিবেচনা করে এনবিআরের কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
এনবিআর থেকে অর্থমন্ত্রনালয়ে দেয়া চিঠিতে জানানো হয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়া হলে বৈষম্য হবে। রামপাল কেন্দ্র সুবিধা পাবে কিন্তু অন্য কেন্দ্র পাবে না। যা পরবর্তীকালে সমস্যা তৈরী করবে। আমদানির ক্ষেত্রে এখনই নানা ধরনের কর ছাড় আছে। নতুন করে ভ্যাট প্রত্যাহার কিংবা কোন সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না।
২০১৩ সালের মার্চে এই কোম্পানির ভারতীয় চাকরিজীবিদের কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। আগামী ১০ বছর তারা এই সুবিধা পাবে। এছাড়া দতা ও পরিচালনার ওপর কোনো জামানতের বিধানও রাখা হয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে বিদেশি কোন কোম্পানি বা ব্যক্তি বিনিয়োগ করলে তার যে লাভ হবে সেই লাভের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ কর দেয়ার কথা। বাংলাদেশে শুধু গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আওতায় কিছু কোম্পানিকে এই সুবিধা দেয়া হয়। যদিও সে অর্থ আবার পেট্রোবাংলা এনবিআরকে দিয়ে দেয়। কিন্তু রামপালের ক্ষেত্রে কেউ এই করের অর্থ দেবে না।
কেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিকভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ ঋণ নেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ সমানভাবে বাংলাদেশ ও ভারত যোগান দেবে। আমদানি করা কয়লা দিয়ে কেন্দ্রটি চলবে। বিআইএফপিসি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই কোম্পানির ৫০ ভাগ ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি’র (এনটিপিসি) এবং বাকী ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’র (পিডিবি)। এই কোম্পানি বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য এক হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিবেশ পর্যবেণ ও নকশা করার কাজ চলছে।