রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশল ও ক্রয় চুক্তি

রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রকৌশল ও ক্রয় চুক্তি হল। ভারতের ভেলকে ঠিকাদার হিসেবে এই কাজ দেয়া হল। ২০১৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাজধানির হোটেল সোনারগাঁও-এ ভেল ও বিআইএফপিসিএল এর মধ্যে এই চুক্তি হয়।
চুক্তির মধ্য দিয়ে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মূল কাজ শুরু হল। যদিও পরিবেশবাদিরা সুন্দরবনের ক্ষতি হবে বলে এর বিরোধিতা করে আসছেন।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কোন সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা দিতে পারবে না। বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব বাড়বে। ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নে কাধে কাধ দিয়ে অংশ নেবে। সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বলা হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঋণ চুক্তি করা হবে।
বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। শর্ত অনুযায়ি আগামী তিনমাসের মধ্যে ঋণ চুক্তি করতে হবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক এই ঋণ দেবে।
কেন্দ্রটির মালিক ও উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) এবং ঠিকাদার কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেডের (ভেল) মধ্যে চুক্তিতে সই করেন বিআইএফসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য এবং ভেল’র জেনারেল ম্যানেজার প্রেম লাল যাদভ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সমান ৫০ ভাগ অংশীদারিত্বে বিআইএফপিসিএল করা হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (১৪৯ কোটি ডলার)। এর ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করবে উদ্যোক্তা কোম্পানি। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারই এই ঋণ সংগ্রহ করবে। ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক ঋণ দেবে। প্রায় পৌনে দুই শতাংশ সুদে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই অর্থ পাওয়া যাবে। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঋণ চুক্তি হতে পারে।
নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে ভেলের নির্বাচন ও নিযুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশ পক্ষ তথা পিডিবি অনুমোদন করেছে গত জানুয়ারি মাসে। এরপর এনটিপিসির অনুমোদন পাওয়ার পর চুক্তি সইয়ের জন্য ভেলকে চিঠি দেওয়া হয়। তবে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেরীতে মঞ্জুরি দেয়ায় নির্মাণ চুক্তি সইও পিছিয়ে যায়।
গতকাল
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, বাংলাদেশকে ভয়ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে রাখা যাবে না। সন্ত্রাস আমাদের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তরুণদেরকে ধর্মান্ধতা ও অন্ধকারের পথ ছেড়ে ঠিক পথে ও দেশ গড়ার কাজে অংশীদার হতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎখাতে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তও উন্মোচন করবে এই প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে এই ১৪৯ কোটি ডলার মূল্যের চুক্তিতে অর্থায়ন করবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবেশ রক্ষা করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হবে। প্রকৃতপক্ষেই অনেক কয়লা আমদানির মাধ্যমে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সকল উদ্বেগ নিরসন করেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উজ্জ্বলতর দিন সামনে।
ভারতের বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার পূজারী বলেন, আন্তর্জাতিক সকল মানদ- রক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরো গতিশীল হবে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, শিগগিরই প্রকল্পটির ঋণ চুক্তি সম্পাদিত হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক মান রক্ষা করে কেন্দ্রটি নির্মাণে ভেল’র প্রতি আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, প্রকল্পটিতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের আওতায় এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদ্যুৎখাতে দুই দেশের যৌথ অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত কাঁধে কাঁধ দিয়ে অংশ নেবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদেও মধ্যে বক্তব্য দেন পিডিবির চেয়ারম্যান মো. শামসুল হাসান মিয়া ও এনটিপিসি’র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুরদীপ সিং।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১০ সালে পিডিবি ও এনটিপিসি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। আমদানি করা কয়লানির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহারের জন্য কয়লার উৎস, কয়লা আনার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি এখনও নিশ্চিত হয়নি। নির্মাণ শেষে কেন্দ্রটির জন্য প্রতিদিন কয়লা লাগবে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন।