রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনে ইউনেস্কোকে আমন্ত্রণ

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ইউনেস্কোকে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে ইউনেস্কোকে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়। সুন্দরবন থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার দূরত্ব, যন্ত্র, ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো পর্যালোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ইউনেস্কোকে।
রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আদৌ পরিবেশের ক্ষতি করবে কিনা তা নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনার জন্যই ইউনেস্কোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
এবিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ইউনেস্কো নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করবে বলে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তখন এবিষয়ে সকলের পরিস্কার ধারণা থাকবে।
পরিবেশবিদরা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতা করে আসছেন। তারা বলছেন, সুন্দরবনের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ইউনেস্কোও এই বিষয়ে গত বছর সরকারকে দেয়া এক চিঠিতে এই কেন্দ্র করার বিরোধীতা করেছিল। অপরদিকে ২০১৪ সালের ১২ জুন জাতিসংঘের জলাভূমি বিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেয় সরকারকে। চিঠিতে বলা হয়, সুন্দরবন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা রামসার চুক্তির বরখেলাপ হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রামসার সদস্য পদ হারাতে পারে।
গত মাসে নরওয়ের কাউন্সিল অন এথিকস এ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধীতা করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের এ প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ আছে। ভারত উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৫০ ভাগ নিয়ে নেবে। কিন্তু এর বিপর্যয়ের শিকার হবেন বাংলাদেশের নাগরিক ও পরিবেশ। যদি পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলেও উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ওই স্থানে এমন ভয়াবহ ঝুঁকির কথা বিবেচনায় না নিয়ে কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা একেবারে অনুচিত। তবে পরিবেশ রক্ষায় কী করা হচ্ছে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই এ সংক্রান্ত কোম্পানির কাছে।
বাংলাদেশের তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধীতা করে আসছে। সম্প্রতি টিআইবি এই প্রকল্পের পরিবেশগত সমীক্ষা যথাডথ হয়নি বলে অভিযোগ করেছে। তারা নিরপেক্ষভাবে পরিবেশের সমীক্ষা করার দাবি করেছে।
সুন্দরবনের নিরাপদ দূরত্বে এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে না। এই কেন্দ্রর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সুন্দরবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সুন্দরবনসহ আশপাশে প্রাণী ঝুঁকির মধ্যে পড়বে ইত্যাদি অভিযোগ করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাক দরপত্র বৈঠক করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০ টি কোম্পানির ৮০ জন প্রতিনিধি অংশ নেয়। এরপর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন মোট ৫টি কোম্পানি দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ড্-শিপ কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিলি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভি এস তাম্রকার বলেছেন, এই কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। অত্যাধুনিক যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এতে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ কেন্দ্রের কয়লা ঢেকে আনা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা পানি পশুর নদীতে ফেলার সময় তা ঠাণ্ডা করা হবে। ফলে জলজ প্রানি এবং উদ্ভিদের কোন ক্ষতি হবে না। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বার বারই এই বিষয়ে বলা হলেও একটি শ্রেণী বিরোধীতা করেই যাচ্ছে। তাই ইউনেস্কোকে এই কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা নিজেরাই কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে তাদের অভিমত দেবেন।