বুধবার বাংলাদেশ দিয়ে আসামের তেল যাবে ত্রিপুরায়

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সড়ক পথে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে ত্রিপুরায় আগামী বুধবার থেকে ভারতীয় তেল করপোরেশন জ্বালানি পরিবহন শুরু করবে।

গতানুগতিক ভারতীয় পাহাড়ি পথে পেট্রোল ও ডিজেল পরিবহনে সমস্যার কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আগরতলার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আইএএনএস জানিয়েছে।

এজন্য গত ১৮ অগাস্ট ঢাকায় বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটিডের (আইওসিএল) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত (এমওইউ) সই হয়।

ওই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক-লরি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রিপুরায় যাতায়াত করবে। তবে এক্ষেত্রে ভারতকে সড়কের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ নির্ধারিত ফি দিতে হবে।

আগরতলার ওই কর্মকর্তা বলেন, “আইওসিএলের কর্মকর্তা ও ট্রাকওয়ালাদের পাসপোর্ট মঙ্গলবারের মধ্যে হাতে পেলে আসাম থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।”

আইওসিএলের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থাটিকে বলেন, ভারতীয় ট্যাংকারগুলো উত্তর আসামের বঙ্গাইগাঁও থেকে যাত্রা করে মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত-সিলেটের তামাবিল-মৌলভীবাজারের চাতলাপুর হয়ে প্রায় চার ঘণ্টায় ১৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশপুরে ঢুকবে।

ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পর খালি যানবাহনগুলো বাংলাদেশের চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে।

বাংলাদেশ হয়ে নতুন এই পথে জ্বালানি পরিবহনে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এসব পণ্য ৪০০ কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ত্রিপুরায় নিতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। তাছাড়া মেঘালয় ও দক্ষিণ আসাম হয়ে জাতীয় মহাসড়কের অবস্থাও খুব খারাপ।”

সম্প্রতি ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ভূমিধসের কারণে আসাম থেকে ত্রিপুরাগামী সড়কপথ (এনএইচ-৪৪) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবস্থা নিরসনে মানবিক কারণে আসাম থেকে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল ও এলপিজি পরিবহনের জন্য ভারত সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশ এই সহযোগিতায় রাজি হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ত্রিপুরার জনগণের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সর্বোপরি মানবিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে।

এর আগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ত্রিপুরায় খাদ্য শস্য ও ভারি যন্ত্রপাতি বহনে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সরকার।

আসাম ও মেঘালয়ের গতানুগতিক বন্ধুর পথ এড়িয়ে গত সপ্তহে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে দুই হাজার ৩৫০ টন চালের নতুন একটি চালান ত্রিপুরায় পাঠিয়েছে ভারতের খাদ্য করপোরেশন (এফসিআই)।

এর আগে ত্রিপুরায় ৭২৬ মেগাওয়াট ‘পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম পরিবহনে ভারতের অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেডকে (ওএনজিসি) বাংলাদেশের পথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সরু একটি পাহাড়ি ভূমি রয়েছে চড়াই-উৎরাইয়ের ওই পথে যানবাহন বিশেষ মালবোঝাই ট্রাক চলাচল খুবই কঠিন।

সড়ক পথে গুয়াহাটি হয়ে আসাম থেকে কলকাতার দূরত্ব এক হাজার ৬৫০ মাইল, দিল্লির দূরত্ব দুই হাজার ৬৩৭ মাইল। কিন্তু বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৬২০ কিলোমিটার।