বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বাজেট ভাবনা

সম্প্রতি টিভি টক শোতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা কয়েকজন এক আলোচনায় ছিলাম। তাঁর বক্তব্যের শুরুতে তিনি বললেন, চাহিদামাফিক আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। গত ৬ মে সাত হাজার ৭১২ মেগাওয়াট উৎপাদন করে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রের্কড স্থাপন করেছি। উৎপাদনক্ষমতা অর্জন করেছি ১১ হাজার ২০৩ মেগাওয়াট। এ বক্তব্যে মনে হতে পারে, বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে এ এক নজিরবিহীন সফলতা।

গত ১৪ মে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য বাজেটে এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গত অর্থবছরে ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৭.৪০ শতাংশ। অনুমোদিত এডিপির ওই প্রস্তাবে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বরাদ্দ রইল ১৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। ফলে প্রবৃদ্ধি হবে ৭৭.৬৮ শতাংশ। চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ২.৭০ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বাজেটে এমন বরাদ্দ বৃদ্ধি ভাবা যায় না। সুতরাং বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান তথা বিদ্যুৎঘাটতি পূরণে এ বাজেট এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে হতে পারে।

প্রস্তাবিত এডিপিতে জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ২২২ কোটি টাকা। তাতে প্রবৃদ্ধি হবে (-) ১০.৩১ শতাংশ। চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল (-) ১.৪৬ শতাংশ। এসব তথ্য ও প্রমাণে প্রতীয়মান হয়, এডিপিতে বিদ্যুৎ খাতে ক্রমবর্ধমান হারে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জ্বালানি খাতে হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন জ্বালানি খাত উন্নয়নের সঙ্গে ধারাবাহিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ও অসম। অর্থাৎ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত অসম ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের মধ্যে আছে। এমন অসংগতি ভাবায়।

প্রতিবছরের মতো এবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বাজেটের ভূমিকা নিয়ে লেখার অনুরোধ ছিল। সময়ের অভাবে লেখাটি যথাসময়ে হয়ে ওঠেনি। শুক্রবার ছুটির দিন অফিস খুলে বসেছি সকাল ১০টা থেকে। দুবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। দীর্ঘ সময় আসেনি। আমি সরাসরি কম্পিউটারে কম্পোজ করি। শুরু করতে পেরেছি দুপুর ১টায়। এমন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বিশেষ করে গরমে, মানুষ মেনেই নিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টার ওপরে বর্ণিত বক্তব্য ভাবনায় ফেলেছে। ভাবনায় পড়েছি যেমন জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্যে, তেমনি বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে।

কিন্তু এডিপি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি যথাযথ বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এডিপিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রবণতা বেশি। ফলে প্রকল্পসংখ্যা বাড়ে। মোট বরাদ্দ বাড়লেও প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ চাহিদামাফিক বাড়ে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হয়। ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বরাদ্দ বৃদ্ধি ব্যয় বৃদ্ধি সমন্বয়ে ব্যবহৃত হয়, প্রকল্পের অগ্রগতিতে কাজে আসে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পসমূহও এমন পরিস্থিতির শিকার। এ ছাড়া প্রকল্পে অর্থ সরবরাহও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে অর্থ সরবরাহকারী উৎসের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিবিয়ানায় ২দ্ধ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বিনিয়োগ সংকটে পড়ায় বাতিল হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের উন্নয়ন সরকারি খাতে রেখে করা হলে এ ধরনের ঝুঁকি কমে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প ৯৯৮টি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে ৯৫৬টি। অর্থাৎ নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত খুব কম হলো। ফলে আগামী অর্থবছরে এডিপিভুক্ত বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা কম এবং বরাদ্দ বেশি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থপ্রবাহ ঝুঁকিতে থাকবে না। তবে প্রাথমিক জ্বালানিপ্রবাহ সংকটে থাকায় উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিদ্যুৎপ্রবাহে ঝুঁকি বাড়বে।

প্রস্তাবিত এডিপির বরাদ্দে পরিবহনের পরই গুরুত্ব পাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। এ বরাদ্দের বেশির ভাগই বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর। তাতে ধরা হয়েছে, সরকারের ব্যয় ছয় হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা ৯ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির নীতিমালা মতে একান্ত অপরিহার্য ও উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত না হলে সরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প এডিপিভুক্ত হবে না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জন অগ্রাধিকার পাবে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ পরিকল্পনা মেয়াদে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ ধরা হয় ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। তার মধ্যে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ খাতে ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ আকর্ষিত হতে হবে। সেই বিবেচনায় বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির লক্ষ্যও নির্ধারিত হয় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যের মধ্যেও এ লক্ষ্য থাকবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বাজেট ভাবনা

লক্ষ্য ছিল, বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে ৫০০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। অথচ সে বিনিয়োগ এসেছে ২৮ কোটি ডলার মাত্র। এই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যে প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট করা হয়, সেগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা (৪৫০ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট (৪৫০ মেগাওয়াট), ভোলা (১৫০-২২৫ মেগাওয়াট), সাভার (১০০ মেগাওয়াট), কালিয়াকৈর (১০০ মেগাওয়াট) ও আমদানীকৃত কয়লাভিত্তিক খুলনা (এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট) ও চট্টগ্রাম (এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পসমূহ। এসব কোনো প্রকল্পেই বিদেশি বিনিয়োগ আাসেনি। এসব প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ২০০৯ সালে লন্ডনে রোড শো হয়। এরপর বিভিন্ন দেশে আরো পাঁচটি রোড শো হয়। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ সংকট কাটেনি। প্রস্তাবিত এডিপিতে অস্বাভাবিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণ এখানেই। এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় গৃহীত আপৎকালীন কৌশল মাত্র। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়ন পথনকশায় গৃহীত পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন হলে ২০১৫-১৬ অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে তেল-বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯০২ কোটি ইউনিট থেকে কমে হতো ৩৫২ কোটি ইউনিট। কয়লা-বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯১ কোটি ইউনিট থেকে বেড়ে হতো ৪০৪ কোটি ইউনিট। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে বরাদ্দের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতো না। বরং জ্বালানি খাতের মতো বিদ্যুৎ খাতের এডিপি বরাদ্দও ক্রমাগত হ্রাস পেত। এ বৃদ্ধি বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে সরকারের গৃহীত নীতি ও কৌশল ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক, তারই প্রমাণ।

দেশ প্রাথমিক জ্বালানি সংকটে আছে। গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে। অথচ অবৈধ সংযোগ থেমে নেই। শিল্প গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা রয়েছে দিনপ্রতি ৩০০ এমএমসিএফটি। পাবে ১০০ এমএমসিএফটি। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও চহিদামাফিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে তরল জ্বালানি চাহিদা শিল্প ও পরিবহনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেড়েছে। জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাসের পাশাপাশি তরল জ্বালানি ব্যতীত অন্য কোনো জ্বালানির সংস্থান হয়নি। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্যাস হোক কিংবা তরল জ্বালানি হোক, কোনো জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। জ্বালানি সংকট উপশম হয় না। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বড় ও মাঝারি শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষিত হয় না। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় গ্রিড বিদ্যুতের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় এবং গ্রিড বিদ্যুৎ বণ্টন ও মূল্যহার বিন্যাসে বড়, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য উপশম না হওয়ায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। এসব বিষয় প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব পায়নি। সরকারি বিনিয়োগে জ্বালানি খাত উন্নয়নে সরকার অনাগ্রহী হওয়ায় এডিপিতে একদিকে বরাদ্দ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত ও অনিশ্চিত। ফলে জ্বালানি খাত উন্নয়ন বিনিয়োগ সংকটে আছে।

চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক (১৯৯০-৯১ থেকে ১৯৯৪-৯৫) পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, উত্তোলনযোগ্য যতটুকু গ্যাস অবশিষ্ট আছে, তা থেকে আগামীতে আর কোনো নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। অথচ উত্তোলনযোগ্য মজুদ গ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যৌক্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়াই ২০ বছর ধরে গ্যাস খাত উন্নয়ন চলছে। বিদেশি বিনিয়োগে জলে-স্থলে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জলে নয়, স্থলে সরকারি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে সে সুযোগ খুবই সীমিত। দেশীয় কম্পানি বাপেক্স গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নিয়োজিত। সরবরাহকৃত গ্যাসে তার গ্যাসের অনুপাত মাত্র ৪.৫০ শতাংশ। এ ছাড়া গ্যাস সঞ্চালনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইওসির মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ হয়। আবার এ বিনিয়োগ গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় যেমন অত্যধিক বাড়ায়, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও।

নীতিগত বিবেচনায় জ্বালানি খাতের উন্নয়নকে সরকার অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। ফলে কয়লা খাতে সরকারি বিনিয়োগ নেই। আবার বিনিয়োগকারীর জন্য রপ্তানিসহ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সুযোগ না থাকায় এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় ব্যক্তি খাত কর্তৃক আমদানীকৃত কয়লায় ব্যক্তি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। আবার ব্যক্তি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল আমদানি ব্যক্তি খাতে হচ্ছে। এসব কারণে এডিপিতে জ্বালানি খাত উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সরকারের নীতিগত অবস্থানের কারণে জ্বালানি খাত উন্নয়নে এডিপি বরাদ্দ হ্রাস পাচ্ছে। আবার বিদেশি বিনিয়োগের নিশ্চয়তা নেই। ফলে প্রাথমিক জ্বালানি সংকট মুক্ত হয় না।

গ্যাস খাত লাভে আছে। সম্পদমূল্য হিসাবে পৃথকভাবে প্রতি একক গ্যাসে ২৫ টাকা হিসাবে ভোক্তাদের কাছ থেকে বছরে দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে আগামী অর্থবছরে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে পাওয়া যাবে সুদসহ এক হাজার কোটি টাকা। শুল্ক-ভ্যাট, করপোরেট কর ও ডিভিডেন্ড বাবদ সরকার পাবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থা ও কম্পানির নামে এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে সঞ্চয় রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন সংস্থা ও কম্পানির নামেও এফডিআর হিসাবে সঞ্চয় রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এসব উৎসকে বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বিনিয়োগের উৎস গণ্য করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ বা ব্যক্তি খাত বিনিয়োগের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিনিয়োগ সংকটে থাকে না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিদেশি বা ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যয় হয়েছিল ২০১২-১৩ অর্থর্বছরে জ্বালানি তেলে ১৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ও বিদ্যুতে পাঁচ হাজার ১৭০ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যয় ধরা হয়েছিল তেলে সাত হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ও বিদ্যুতে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ধরা হয় তেলে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ও বিদ্যুতে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কারণে তেল আর্থিক ঘাটতিতে নেই। লাভে আছে। ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির শর্তে তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ভর্তুকিসহ পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার ৪.৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে বছর প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশের কম। ফলে ১০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় সাশ্রয়ী অর্থে ঘাটতি সমন্বয় হয় এবং অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। ফলে চলতি অর্থবছরে এডিপির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলার ঝুঁকি ছিল না। আগামী অর্থবছরেও জ্বালানি খাত লাভে থাকবে। ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মতো সরকারি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল শুল্ক-ভ্যাট মুক্ত হলে ও বিশ্ববাজারে তেলের দরপতন বিদ্যমান মূল্যহারে সমন্বয় হলে বিদ্যুৎও লাভে থাকত। পাঁচ হাজার ২০ কোটি টাকা ঘাটতির অজুহাতে চার হাজার কোটি টাকা ভতুর্কি দেখিয়ে ৫.১৫ শতাংশ বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার বৃৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করা যেত না। জনস্বার্থসম্মত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়ন উপযোগী না হলেও আগামী অর্থবছরের বাজেটভুক্ত এডিপি ব্যক্তি খাত বিনিয়োগকারীর জন্য পর্যাপ্ত মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টির উপযোগী হবে।

লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ