বিদ্যুৎখাতে দুটি অর্জন

বিদ্যুৎখাতে দুটি মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। দেশীয় কোন কোম্পানি এককভাবে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। একই সাথে সরকার ও বেসরকারিখাত এক সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। দুটিই বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে প্রথম।
সংশ্লিষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেসরকারি কোম্পানির সাফল্য দেশের জন্যই ভাল। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি যৌথভাবে যা করছে সেটাও নতুন পথ দেখাবে।
দেশে প্রথম বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে সাফল্য এনেছে সামিট গ্রুপ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষ কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেড দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিশেষ সাফল্য পেয়েছে। এর একটি দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস অথবা ডিজেল) ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার মেঘনা ঘাট কেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন শুরু করেছে। তবে গ্যাস–সংযোগ সম্পন্ন না হওয়ায় কেন্দ্রটি এখন ডিজেলে চলছে।
সামিটের অন্য বড় কেন্দ্রটি হচ্ছে গ্যাসভিত্তিক ৩৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিবিয়ানা-২। এটি পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। এর আগে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান এত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করেনি।
সামিটের পরিচালক (অর্থ) আয়েশা আজিজ খান বলেন, দীর্ঘ স্বপ্নযাত্রার মধ্য দিয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তাঁদের এই সাফল্য এসেছে। এই কেন্দ্র দুটি স্থাপনে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছেন বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে। তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে বিনিয়োগ (ইকুইটি) দরকার, তা দেশের ভেতর থেকে সংগ্রহ করা। আর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, দেশের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং দেশের বাইরে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অংশ নেয়া।
আশুগঞ্জে প্রথম পিপিপি: পিপিপি খাতে দেশের প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে আশুগঞ্জে। সরকারি খাতের আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি ও বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেড’ এই কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে। ৭ মে চালু হওয়া ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রটি দেশের প্রথম ‘মডুলার’ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান এস এ মঈদ বলেন, মডুলার বিদ্যুৎকেন্দ্র ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত হয়। আশুগঞ্জ কেন্দ্রটিতে রয়েছে ২০টি আলাদা ইঞ্জিন। প্রতিটি ইঞ্জিনের সঙ্গে রয়েছে একটি করে বয়লার। বয়লারগুলো ইঞ্জিনের তাপ ধরে রেখে প্রায় ১৬ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বাড়তি জ্বালানি ছাড়াই।
সিরাজগঞ্জে মোট এক হাজার ৭৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে একটি ‘পাওয়ার হাব’ গড়ে তুলছে সরকারি খাতের ‘নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)’। এর মধ্যে ২২৫ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র ৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে গ্যাসভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াটের আরও একটি এবং দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক ৪০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এনডব্লিউপিজিসিএল এ ছাড়া পটুয়াখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক এবং খুলনায় গ্যাসভিত্তিক একটি কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। খুলনার কেন্দ্রটিতে গ্যাস আসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর এলাকায় সে দেশের একটি কোম্পানির স্থাপিত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে। এই গ্যাস আনার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি পাইপলাইন স্থাপিত হবে।
এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্য এসেছে প্রধানত অল্প ক্ষমতার ভাড়াভিত্তিক, দ্রুত ভাড়াভিত্তিক ও সান্ধ্যকালিন (পিকিং, সর্বোচ্চ চাহিদার সময় চালানোর জন্য স্থাপিত) কেন্দ্রর মাধ্যমে।
সরকারি-বেসরকারি ও পিপিপির মাধ্যমে স্থাপিত মাঝারি ও বড় আকারের কেন্দ্রগুলো চালু হতে শুরু করেছে।