বিদ্যুতে আগামী ৫ বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। যা গত দশ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্র স্থাপনে এই বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি বিনিয়োগ। বাকীটা নিজস্ব অর্থে।
দেশে চলমান বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে এই অর্থের হিসাব জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এই বিনিয়োগের বিদেশি অংশের প্রতিশ্রুতির প্রায় পুরোটাই নিশ্চিত হয়েছে। আর সরকারিভাবে প্রতিবছর বাজেটে পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ রেখে খরচ করা হবে।
বিদ্যুৎখাতে যে বিনিয়োগ আসছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরমাণু বিদ্যুতে। রূপপুরের পরমাণু বিদ্যুতে। রাশিয়া এই অর্থ বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ভারত, চীন ও জাপান আলাদা আলাদা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে। এই চার দেশের বিনিয়োগে দেশের সবচেয়ে বড় বড় চারটে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এর প্রত্যেক কেন্দ্রর কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন সব থেকে ভালো পরিবেশ। বাংলাদেশে এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিনিয়োগের পরিবেশে ভালো। এজন্য বিদেশিরা আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশি। বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেই চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যারা ৪৫ বছরেও বাংলাদেশের দিকে মুখ তুলে তাকায়নি তারাও এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসছে। ফ্রান্স, ইউরোপ, চায়না, জার্মান সিঙ্গাপুর থেকে বিনিয়োগকারিরা বাংলাদেশে বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগ করছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে খরচ হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা (১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার)। এর মধ্যে রাশিয়া বিনিয়োগ করবে ৯১ হাজার ৪০  কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার)। আর বাকীটা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে।
রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র করা হচ্ছে ভারতের অর্থায়নে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) এটা করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে।
পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ¶মতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে চীন। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি এটা করছে। এখানেও বিনিয়োগ হবে দুই বিলিয়ন ডলার। ঋণচুক্তি হয়েছে। দ্রুত সময়ে এই অর্থ ছাড় হবে।
মাতারবাড়িতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে জাপান। এতে খরচ হবে চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া জার্মানি, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদিআরবসহ অনেক দেশ বিনিয়োগের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের বেশিরভাগেরই প্রতিশ্রæতি নিশ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এই বিনিয়োগ খুবই জরুরি। এতে বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নতি হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ¶মতর ৪৭টা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে আসবে। এখন দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা আছে ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গড়ে উৎপাদন হচ্ছে আট হাজার মেগাওয়াট।
গত ৯ বছরে (২০০৯-২০১৭) বিদ্যুৎখাতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়র ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি খাতে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি খাতে ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।