বিইআরসি সরকার অথবা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছে: ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিইআরসি ‘দন্তহীন বাঘে’ পরিণত হয়েছে। এর ফলে জ্বালানির ওপর জনগণের অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। সংস্থাটি কখনো সরকার, কখনো ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে বিইআরসি আইন ও বিইআরসি’র ভূমিকা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, বিইআরসি’র যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার প্রয়োগ না করে তারা মন্ত্রণালয় বা সরকার মুখী হয়ে আছেন। তারা স্বাধীন একটা প্রতিষ্ঠান কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। আইনে আছে গণশুনানির মাধ্যমে ভোক্তার কথা শুনতে হবে। কিন্তু বিইআরসি তা শোনে না। তবে ভোক্তার কথা শুনতে বাধ্য করতে যা করণীয় তাই করতে হবে।

২০০৩ সালের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন কোনো কাজে আসছে না। সেখানে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে এই আইনের বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করতে হবে। সেই সঙ্গে আইন প্রয়োগের সরকার কোন বাঁধার সৃষ্টি করছে কিনা সে বিষয়টি দেখতে হবে। সঙ্গে বিইআরসিকে কিভাবে আরও ক্ষমতায়ন করা যায় সে বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইন আছে তবে সেই আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিইআরসি সরকার এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু বলতে বা করতে পারে না। কারণ বিইআরসি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য একটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকা উচিত। বিশ্ব বাজারে দাম বাড়লে আমাদের মত দেশে হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেয়াটা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, গত সাড়ে ৫ বছরে সরকারের তহবিলে বিপিসি ১০ হাজারেরও বেশি অর্থ লাভ হিসেবে জমা দিয়েছে। ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর সবই ভোক্তাদের থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থের দ্বারা সম্ভব হয়েছে। গত কয়েক মাসে বিপিসি’র লোকসান হয়েছে এক হাজার একশ’ কোটি টাকার কিছু বেশি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ বা উন্নত দেশগুলোর মত ও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ওঠা নামার সাথে সাথে দেশে মূল্য বৃদ্ধি বাড়ার বিষয়টি বাস্তব সম্মত নয়। বিশেষ করে আমার দেশের প্রেক্ষাপটে। তার মূল্য যাতে দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীল থাকে এবং অর্থনীতি যাতে গতিশীল থাকে সেজন্য মূল্য নির্ধারণ করার পরে ঘন ঘন পরিবর্তন কাম্য নয়।

মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটি, ক্যাব এর আহ্ববায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমরা বিইআরসি’কে শক্তিশালী করতে চাই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। জ্বালানি তেলের দাম ইচ্ছে করলেই বাড়ানো সম্ভব নয়।

ক্যাব এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসি আইন ও বিইআরসি’র ভূমিকা কতটা জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ করছে সে ব্যাপারে মূল্যায়ন প্রতিবেদন হাজির করা হয়েছে। এবং এর ধারাবাহিকতায় ভোক্তাদের পক্ষ থেকে একটি পলিসি সরকারের কাছে দাখিল করতে যাচ্ছি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করতে চাই এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য সক্রিয়ভাবে সরকারকেও শক্তিশালি করতে চাই। শুধু বিইআরসিকে নয়। কারণ আমরা অনেক সময় দেখতে পাচ্ছি সরকারও অসহায়।

তিনি বলেন, বিইআরসি কে তুলে দেবার যড়যন্ত্র হচ্ছে। সচিবরা বলছেন বিইআরসি’র দরকার কি? যদি কেউ বলে বিচার বিভাগের দরকার নেই তাহলে ভাবুন কি ধরণের অভয়ারণ্য সৃষ্টি হবে। সেরকমই যেসমস্ত সচিবরা বলেন যে বিইআরসি’র দরকার নেই তাহলে তারা এই জ্বালানি জগতে, ভোক্তা অধিকারটা কেমন ভয়ংকর হয়ে যেতে পারে। তারা এখন সেইটা চায়। তারা একাধিকবার প্রস্তাব নিয়ে গেছে বিইআরসিকে ক্ষমতাহীন করার জন্য। বিইআরসি’র যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করতে দিচ্ছে না বরং আবারও আইন করে তাকে ক্ষমতাহীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, ক্যাব এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি ইন্সটিটিউটের এসোসিয়েট প্রফেসর ড. এস এম নাফিস শামস, এনার্জিপ্যাক এর পরিচালক হুমায়ুন রশীদ, ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, অটোগ্যাস স্টেশন মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সিরাজুল মওলা সহ অন্যরা।