বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ: নসরুল হামিদ

বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানিতে যা বরাদ্দ আছে তা যথেষ্ট। এছাড়া আরও বিদেশী ঋণ পাওয়া যাবে। অর্থের কোন সমস্যা নেই। এখন সামনে এই কাজ বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ।
শনিবার রাজধানির রেডিশন ব্লু হোটেলে অনুষ্ঠিত এক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) উত্তরা, আফতাবনগর, পূর্বাচল, বসুন্ধরা ও গুলশান-বনানী এলাকায় ১৩২/৩৩/১২ কেভি পাঁচটি উপকেন্দ্র এবং মাটির নিচে ১২৮ কিলোমিটার ১৩২ কেভি সোর্স লাইন স্থাপন করবে। এই উপকেন্দ্র স্থাপন করতে ৯৪৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা লাগবে। এরমধ্যে এডিবি ঋণ দেবে ৫৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, সরকার থেকে পাওয়া যাবে ১৬০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ডেসকো নিজস্ব বিনিয়োগ করবে ২৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
উপকেন্দ্রগুলো স্থাপন করবে কোরিয়ান কোম্পানি হাইওসাং করপোরেশন। ডেসকোর সাথে হাইওসাং করপোরেশনের এবিষয়ে চুক্তি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ-জ্বালানিখাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও বিদেশী ঋণ আছে। সেখানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা এই বছর এই খাতে খরচ করতে হবে। ফলে কত অর্থ বরাদ্দ হলো তা মূল কথা নয়, সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করারই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন ডেসকোর বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম, এনডিসি, ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শাহিদ সারওয়ার, এশীয় উন্নয়ন ব্য্যাংকের (এডিবি) আঞ্চলিক পরিচালক কাজুহিকো হিগুচি ও হ্ইাওসাং এর জেনারেল ম্যানেজার ইয়ান তি বু।
ডেসকোর সচিব প্রকৌশলী জুলফিকার তাহমিদ ও হ্ইাওসাং এর জেনারেল ম্যানেজার ইয়ান তি বু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
নসরুল হামিদ বলেন, উন্নত বিশ্বের কোথাও কোথাও মাথাপিছু পাঁচ হাজার কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে এখনও মাত্র ৩৬৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। আগামীতে ২৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এই বিদ্যুৎ বিতরণে জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আরও তৎপর হতেহবে। আরও যোগ্য হতে হবে। গ্রাহকদের সাথে আন্তরিক হতে হবে। উৎপাদনের সাথে বিদ্যুৎ বিতরণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু বিদ্যুৎ বিতরণ করলেই হবে না, গ্রাহকরা সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছে কিনা, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তার খোঁজও রাখতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উন্নয়ন জরুরী। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। বেশিরভাগ বিতরণ কোম্পানির কোনো গ্রাহক সেবা কেন্দ্র নেই। গ্রাহকরা সেবা কেন্দ্রর নম্বর জানে না। গ্রাহকদের এই সেবা দেয়ার দায়িত্ব বিতরণ কোম্পানির।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশে বিদ্যুতের তার ঝুলতে দেখা যায় না। আমাদেরও এই জায়গায় যেতে হবে। দেখা যায়, শহরের সবচেয়ে পচা ভাঙ্গাচুরা ভবনই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কার্যালয়। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডেসকোর অধীন পাঁচটি এলাকায় লোডশেডিং সমস্যার সমাধান হবে। গ্রাহকরা মানসম্মত বিদ্যুৎ পাবে। কারিগরি লোকসান কমবে। লো-ভোল্টেজের সমস্যার সমাধান হবে। ডেসকোতে প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহকের নতুন সংযোগের সক্ষমতা বাড়বে।
বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ডেসকো রাজধানীর পাঁচটি অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। তবে এই কাজ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে দুই কোম্পানির সমন্বিত কাজের ওপর। হাইওসাং যাতে মানসম্মত যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে সে বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি ডেসকো যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে পারে সেদিকে নজর দেয়া জরুরী।