বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারবে না বাংলাদেশ

২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলন (দ্বিতীয় গ্লোবাল টাইগার স্টোকিং কনফারেন্স-২০১৪) শুরু হয়েছিল সে লক্ষ্য বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবে না বলে মনে  করেন সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিশেষজ্ঞরা।

তাদের যুক্তি, বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবনেই বাঘ থাকে। যা আবার সম্পূর্ণ উপযোগী বসবাসের পরিবেশে নয়। ফলে ২০২২ সালের মধ্যে সারাবিশ্বের অন্য সব দেশ তাদের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করায়  সফল হলেও, বাংলাদেশ তা অর্জনে পিছিয়ে থাকবে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনের (দ্বিতীয় গ্লোবাল টাইগার স্টোকিং কনফারেন্স-২০১৪) তৃতীয় ও শেষ দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন।

এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী, ভারতের বাঘ বিশেষজ্ঞ ও গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভের কর্মকর্তা কেশ বর্মা, গ্লোবাল টাইগার ফোরামের কর্মকর্তা রাজা রাজেশ গোপাল, রাশিয়ার বাঘ বিশেষজ্ঞ ড. আন্দ্রে কশলি ও বন বিভাগ কর্মকর্তা ও বণ্যপ্রাণি এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ড. তপন কুমার দে প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র সুন্দরবনেই বাঘ থাকে। এটা বাঘের বংশ বিস্তারের পথে সমস্যা। বাঘের বংশ বিস্তারের জন্য চাই বিশাল ভূমি, সমতল স্থান ও পরিবেশ।

তারা বলেন, সুন্দরবনে মিঠা পানির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেখানে এখন সম্পূর্ণ নোনা পানি। যত দিন যাচ্ছে এ সমস্যা আরো বাড়ছে। সুন্দরবনে মিঠা পানির অভাব; সেইসঙ্গে কমে যাচ্ছে বাঘের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য। এখানে পর্যাপ্ত সমতল ভূমি না থাকায় বাঘের জন্য সহায়ক হচ্ছে না। মূলত এসব কারণে ২০২২ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষে তা অর্জন বেশ কষ্টকর।
বাংলাদেশের প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী বলেন, রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, যত দিন পর্যন্ত সেটি গ্রিন ইন্ড্রাস্ট্রি থাকবে ততদিন বন মন্ত্রণালয়ের কোনো আপত্তি নেই। প্রথমে সেখানে জাহাজভাঙা শিল্প হওয়ার কথা ছিল, এ ব্যাপারে বন বিভাগ কোনো অনুমতিপত্র দেয়নি।তিনি বলেন, সুন্দরবনকে আরো বিশাল করে বাঘের চারণভূমি বৃদ্ধি ও বাঘ রক্ষায় সেখানকার সব নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুন্দরবনে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

ভারতের বাঘ বিশেষজ্ঞ ও গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভের কর্মকর্তা কেশ বর্মা বলেন, যদি একটি বনের বাঘ রক্ষা করা যায় তো সেই বনকেও রক্ষা করা যায়। এটি সহজ পদ্ধতি। বনের বাঘ বাঁচলে সেই বন বাঁচবে। বাঁচবে সে বনের অন্য সব প্রণীও। সুতরাং আমাদের বাঘ রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।রাশিয়ার বাঘ বিশেষজ্ঞ ড. আন্দ্রে কশলি বলেন, বাংলাদেশ বাঘ রক্ষায় যে সফল সম্মেলন আয়োজন করেছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। বাংলাদেশের এ-বিষয়ে আন্তরিকতা রয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে বাঘ রক্ষায় দেশটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যেতে পারে।বাঘ রক্ষায়  বাংলাদেশ ‘বিশ্বনেতা’র  ভূমিকা পালন করছে বলে এ সময় অভিমত দেন তিনি।

তিন দিনব্যাপী এ বাঘ সম্মেলন শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার বিকেলে। এর আগে, রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করনে।

সর্ব প্রথম ২০১০ সালে রাশিয়ায় প্রথম এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।