বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’এর মাসিক ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ ২০১৪ সালের এপ্রিল সংখ্যায় বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনশীল মুদ্রানীতির সাথে অবকাঠামোর অপর্যাপ্ত সরবরাহ বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস করেছে; ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি গত দুই অর্থবছরে কম হয়েছে এবং শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। শনিবার প্রকাশিত উল্পুয়ন অল্পে^ষণের মাসির প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করে,  হ্রাসমান বিনিয়োগ চাহিদার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির কম আমদানি, অভিবাসী খাতে আয় হ্রাস, রপ্তানিতে বৈচিত্র্যের অভাব ও অসন্তোষজনক বৈদেশিক বিনিয়োগ বহিঃখাতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন বাধাগ্রস্থ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় সংকোচিত করবে।

কাঠামোগত ত্রুটিগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রচলিত বাণিজ্য ও শিল্প নীতির আশু পুনঃনিরীক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর দৃষ্টি আকর্ষন করে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে, একটি নতুন ‘উৎপাদনশীলতা সক্ষমতা প্রবৃদ্ধি’ নীতিকাঠামো প্রণয়ন আবশ্যক, যা উৎপাদনযোগ্য সম্পদ ও উদ্যোক্তদের সামর্থ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৩৪০৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ৪.০৩ শতাংশ কম। শিল্পখাতে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ৯.৪৫ শতাংশ ছিল, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯.৩৭ ও ৯.৩৪ শতাংশ ছিল।

বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিটেন্সের হ্রাসমান প্রবাহের দিকে নির্দেশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখিয়েছে যে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ ৯৮৯১.৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা ৬.৯৩ শতাংশ কমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে ৯২০৬.৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, রেমিটেন্সের এ ক্রমহ্রাসমান ধারা অব্যাহত থাকলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগ হ্রাস পাবে ও দারিদ্রতা সৃষ্টির মত বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। গ্রামীণ পরিবার গুলোর আয়ের একটি বড় অংশ রেমিটেন্স থেকে আসে। সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী ২০১০ সালে গ্রামীণ পরিবার গুলোর মোট আয়ের ১৭.২৮ শতাংশ রেমিটেন্স থেকে এসেছে।

রেমিটেন্সের ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধি হারের দিকে নজর দিয়ে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে যে, কম শ্রমিক স্থানান্তর ও মধ্যপাচ্যে শ্রমিকের কম চাহিদার কারণে ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে রেমিটেন্সের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে কমছে। বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিটেন্সে প্রবাহের প্রবৃদ্ধির হার ৭.০২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৭.৪৪ শতাংশ ছিল।

রপ্তানিতে তৈরি পোষাকের একাধিপাত্যের কথা উল্লেখ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে, এ পরিস্থিতি অর্থনীতির কাঠামোগত দূর্বলতাকে নির্দেশ করে এবং পরিস্থিতি বজায় থাকলে অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে হুমকির সম্মুখীন হবে।

বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়কালে তৈরি পোষাক খাতের রপ্তানি ১২২৩৩.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ছিল, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে তৈরি পোষাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১০২২৫.৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা ঐ সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮০.২ শতাংশ।

বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়কালে পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি যথাক্রমে ৫২৭.৩৮, ৩৫৪.৪৪ ও ৩২১.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে যথাক্রমে ৬০৯.৮১, ২৫৯.৫২ এবং ২১০.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।

২০১২-১৩ অর্থবছরে তৈরি পোষাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১০.২২ শতাংশ ও ২১ শতাংশ ছিল, যা গত অর্থবছরে যথাক্রমে ১৫, ১১ ও -১ শতাংশ ছিল।

প্রতিষ্ঠানটি দেখাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ গত পনের বছর ধরে অনিয়মিত ধারায় বাড়ছে। যদিও বৈদেশিক বিনিয়োগর পরিমান বাড়ছে, তা অন্যান্য এশিয়া দেশগুলোর তুলনায় অপ্রতুল। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমান ১১৯৪.৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৫৩.৩৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এই সময়ে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ, যেমন ভারত, ইন্দোনেশিয়া ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ যথাক্রমে ৩২০০০, ১৯০০০, ৭০০০ ও ১৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।

‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ মনে করে, একই অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যধারী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অপ্রতুল বৈদেশিক   বিনিয়োগের প্রবাহের কারণগুলো হলঃ বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব ও সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা।