বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব ভারতের

নিজস্ব প্রতিবেদক/বাসস:
তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। প্রস্তাব অনুযায়ী নেপাল ভূটানে ভারতের উপর দিয়ে শুল্ক না দিয়েই পণ্য পাঠাতে বা যোগাযোগ করতে পারবে বাংলাদেশ। এছাড়া ভূটান পর্যন্ত যে রেল লাইন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ তাও সম্মত হয়েছে ভারত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে এই প্রস্তাব দিয়েছে। দুই নেতা দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। স্থল শুল্ক বন্দরগুলোতে অবকাঠামো এবং স্থাপনাগুলো উন্নয়ন এবং বিশেষ স্থল বন্দরের বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য অশুল্ক বাধা তুলে নেয়াও প্রয়োজন বলে মত দেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত তার ভূখণ্ডের মাধ্যমে বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশন/বিমানবন্দর/সমমুদ্র বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটের মাধ্যমে ভূটানের সাথে রেল যোগাযোগের অনুরোধ করেছে এবং ভারত তার অনুরোধের বিষয়টি কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগগুলো কার্যকর করার জন্য, ভারত বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ক্রসিংয়ে বন্দর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে।
দুই নেতা বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করতে সম্মত হন।
ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করার জন্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। এবিষয়ে বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।

দুই দেশের বিদ্যুতের গ্রিডলাইন সংযুক্ত করতে সম্মত

ভারত থেকে প্রয়োজনমত চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুন সরবরাহ করতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ

ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্তকরণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সমীক্ষায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি উভয় দেশের জন্য ভাল হবে।
তারা উভয় দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে এবং এলডিসি মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য যথাসময়ে এগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী উভয়ই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তারা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, পরিবেশ সম্মত জ্বালানি এবং সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।
যৌথভাবে কিছু প্রকল্প চলমান। যেমন, টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত পরিষেবার জন্য আইটি সমাধান বিনিময় করা ইত্যাদি।
নতুন কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যেমন, কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নতুন গীতালদহ সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেম এবং রেলস্টেশনের আপগ্রেডেশন, বুড়িমারী ও চেংরাবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং সিরাজগঞ্জে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি।
ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনুমানযোগ্য সরবরাহ করতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই নেতা কাটিহার (বিহার) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতার ৭৬৫ কেভি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করতে সম্মত হয়েছে। একই সাথে দুই দেশের বিদ্যুতের গ্রিডলাইন একযোগে সংযুক্ত করতে সম্মত হয়েছেন।
উভয় দেশ বিদ্যুৎখাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মাধ্যমে নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে যে, এর জন্য নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই ভারতে বিবেচনাধীন রয়েছে।
দুই নেতা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন যা বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছে এবং ভারত উভয় পক্ষের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।