বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহাযজ্ঞের সমাপ্তি

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে কলম্বিয়ান পপ সম্রাজ্ঞী শাকিরার গাওয়া ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটি। শাকিরার গাওয়া ওই গানটি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের তালিকায় শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে। বিষয়টি অনুধাবন করেই সমাপনীতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শাকিরাকে। আর সুযোগ পেয়ে নিজের জনপ্রিয়তাকে আরেকবার প্রমাণ করেছেন ৩৭ বছর বয়সী এ তারকা। ‘লা লা লা’ গানে রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের তো মাতিয়েছেনই, সেই সঙ্গে পুরো বিশ্বকে গানের সম্মোহনীতে নাচতেও বাধ্য করেছেন শাকিরা। তাই শুরুটা ভালো না হলেও, সমাপনীটা কিছুটা হলেও ভালো করার চেষ্টা করেছে আয়োজক ব্রাজিল। স্বল্প সময়ের জন্য মঞ্চে উঠে গানের তালে কোমড় দুলিয়ে বিশ্বের লাখো-কোটি ভক্তকেও দুলিয়েছেন শাকিরা। আর সমাপনীর শেষ লগ্নে ভবিষ্যৎ তারকাকেও বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এ পপস্টার। শাকিরা এবং স্পেন দলের সেরা ফুটবলার পিকে জুটির একমাত্র সন্তান মিলানকে নিয়ে মঞ্চে উঠে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে আবারো পারফরম্যান্সে যোগ দেন তিনি। উদ্বোধনীর মতো সমাপনীরও ব্যপ্তি ছিল কম। আর স্বল্প সময়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক মাসের ফুটবল মহাযজ্ঞের ইতিও টানে স্বাগতিক ব্রাজিল।
ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত হয়নি এমন দেশ বিশ্বে খুঁজে মেলা ভার। ছেলে, বুড়ো, শিশুরা তো বুনোউদ্যোম করেছেই, বাদ যাননি ঘরের বধূও। ফুটবল সবাইকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো ছিলই, বাদ যায়নি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও। বিশেষ করে উপমহাদেশের দেশগুলোতে ফুটবল উন্মাদনা প্রতি আসরের মতো এবারো ছিল। অনেক আগ থেকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এ দুই দলের বিরাট সংখ্যক সমর্থক বাংলাদেশে তো আছেই। এ দু’দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ আরো কিছু দেশেরও সমর্থক বেড়ে চলেছে। এখন আর কেউ নিজ ঘরে নয়, বিভিন্ন জায়গায় এমনকি অলি-গলিতেও ঢাউস সাইজের পর্দা লাগিয়ে মেসি, নেইমার, মুলারদের খেলা উপভোগ করেছেন বাংলাদেশের সাপোর্টাররা। তবে ব্রাজিল বিশ্বকাপ বিশ্বে ঝড় তুললেও, নিজ দেশে ততটা আলোড়ন তোলেনি। বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দিলমা রউসেফ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রাম, দাঙ্গা, হাঙ্গামা তো করেছেনই তারা। সেই সঙ্গে স্বাগতিক হয়ে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বাজে হার আন্দোলনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দারুণ এক সমাপনী অনুষ্ঠান করে এর রেশ কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করেছে স্বাগতিক দেশ। এবারো আয়োজন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে ব্রাজিলকে আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত করার আগে ফিফাকে ভালোভাবে ভেবে নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন ফুটবলবোদ্ধারা।
শত সমালোচনার পরও ‘সব ভালো যার শেষ ভালো’ এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কোমর কষে মাঠে নেমেছে ব্রাজিল। সমাপনীতে শুধু শাকিরাই নন, মেক্সিকান গিটারিস্ট কার্লোস সান্তানা, স্বাগতিক দেশের কার্লিনহো ব্রাউন ছাড়া সাম্বা স্কুল এতে সমাপনীতে পারফর্ম করে। তাদের জমকালো পারফরম্যান্স সাও পাওলোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলাতে পেরেছে। সমাপনী অনুষ্ঠানের পরই স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হয় এবারের আসরের সেরা দুই প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা এবং জার্মানি।