নওগাঁয় চুনাপাথরের খনির সন্ধান

বাংলাদেশে নতুন আরও একটি অনেক বড় চুনাপাথর খনি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) ভুতাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে খনিতে চুনাপাথর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আজ বৃহষ্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের একথা বলেন।
খনিতে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি মেট্রিকটন চুনাপাথর থাকতে পারে। তবে পুরো মজুদ নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে। দুই হাজার ২১৪ ফুট মাটির নিচে এই চুনাপাথরের স্তর শুরু। প্রায় ১০০ ফুট পুরু। অর্থাৎ দুই হাজার ৩১৪ ফুট নিচে শেষ।
আগামী দুই বছরের মধ্যে এখান থেকে পাথর তোলা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
দুই মাস আগে জিএসবি নওগাঁতে কূপ খনন শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করে দুই মাসের মাথায় পাথর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে তারা। একই সাথে এই চুনাপাথরের নিচে কয়লা থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার বিলাসপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে চুনাপাথরের অস্থিত মিলেছে। এটি এ পর্যন্ত আবিস্কার হওয়া সবচেয়ে বড় চুনাপাথররে খনি বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এটি বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য কিনা এবং কি পরিমাণ চুনাপাথরের মজুদ আছে তা নিশ্চিত করতে আরও কয়েকটি কুপ খনন করতে হবে। মাটির নিচে দুই হাজার ২১৪ ফুট নিচে এই পাথরের অবস্থান। ওই স্তর থেকে শুরু হয়ে আরও গভীরে বিস্তৃত রয়েছে চুনাপাথর। মাটির নিচে ৬১ ফুট খনন করে চুনাপাথরের অস্থিত নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও খনন চলছে। ধারনা করা হচ্ছে এর পুরুত্ব আরও বেশি।
জিএসবির মহাপরিচালক মো. নেহাল উদ্দিন বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপের ভিত্তিতে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার তাজপুরে যে কূপটি খনন করা হয়েছে, সেটি তিন হাজার ফুট বা তার চেয়েও বেশি গভীর করার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। সে অনুযায়ীই কাজ চলছে। তাঁরা চুনাপাথরের স্তর অতিক্রম করে নতুন ভূ-কাঠামোটি স্পর্শ করতে চাই। নওগাঁর পাশে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাখনির ওপরেও চুনাপাথর পাওয়া গিয়েছিল। সেখানকার ভূ-কাঠামোর সাথে নওগাঁয় আবিস্কার হওয়া চুনাপাথরের ভূ-কাঠামোর যথেষ্ট মিল আছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চুনাপাথর খনি। দেশের সকল সিমেন্ট কারখানায় এই চুনাপাথর ব্যবহার করেও রপ্তানি করা যাবে। খনি থেকে চুনাপাথর তুলে ব্যবহার করতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
১৯৬৩ সালে নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাটে চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার করেছিল জিএসবি। সেখানে ১০ কোটি টন চুনাপাথর মজুদ আছে। বাণিজ্যিকভাবে তা উত্তোলন সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও খনি বিশেষজ্ঞ তৈরি হওয়ায় এমন খনি থেকে সহজেই মূল্যবান সম্পদ আহরণ সম্ভব বলে প্রতিমন্ত্রী মনে করেন।
বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় দুই কোটি মেট্রিকটন চুনাপাথরের চাহিদা আছে।

চুনাপাথরের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। প্রকৃতিতে শুদ্ধ চুনাপাথর খুব কম পাওয়া যায়। বালি, কাদা ইত্যাদির মিশ্রণ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং সালফার ইত্যাদি মৌলে চুনাপাথর অপদ্রব্য হিসেবে মিশ্রিত থাকে।
চুনাপাথর প্রধানত চুন তৈরি করতে ব্যবহার হয়। সিমেন্টের মূল উপাদান হচ্ছে চুনাপাথর। নির্মাণ, রাসায়নিক ও কাঁচ শিল্পে চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। ধাতু নিষ্কাশনে এবং চিনি শিল্পেও চুনাপাথর ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সিমেন্ট কারখানাগুলো তাদের চাহিদামত চুনাপাথর আমদানি করে।