দায়মুক্তির দাম কমলো

নামে মাত্র, দায় মুক্তির জন্য কমানো হল জ্বালানি তেলের দাম। এই সুবিধা সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের ঘরে পৌছবে না। কারণ যে যত সামান্য কমানো হয়েছে, তাতে যারা পরোক্ষভাবে জ্বালানি তেলের সুবিধাভোগি তার দোয়ার পর্যন্ত সেই সুবিধা যাওয়ার ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে নেই।
এই দুই শ্রেণির ব্যবহার করা তেল অর্থাৎ ডিজেল ও কোরোসিনের দাম তুলনামূলক খুব কম কমানো হয়েছে। যার সুবিধা ভোক্তা পর্যন্ত পৌছানো কঠিন।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত দাম কমার ফলে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। গত দুই বছরের এই নিম্মগতি। ব্যারেল প্রতি ১২৫ ডলার থেকে এসে দাঁড়িয়েছিল ২৮ ডলারে। যখন উচ্চ দামে আমদানি করতে হত তখন একাধিকবার বাড়িয়ে সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যখন দাম কমে যেতে থাকলো তখন দেশের বাজারে আর কমানো হয়নি। আর এখন নামে মাত্র তখনই দাম কমানো হলো, যখন আবার বিশ্ববাজারে একটু একটু তেলের দাম বাড়ছে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেতে থাকার পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর তাগিদ ছিল সরকারের প্রতি। বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করেছিল। বলা হচ্ছিল, জ্বালানি তেলের দাম কমালে, প্রবৃদ্ধি হবে। এখন দেখার বিষয় যে হারে দাম কমানো হলো তাতে সেই প্রবৃদ্ধি আসবে কি?
জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে প্রবৃদ্ধির সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সুবিধা পাওয়া যাবে না, কারণ নামে মাত্র, শুধু কমানোর জন্য কমানো হয়েছে। ফলে সুবিধা অধরা থেকে যাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের কাছে। সংখ্যাগরিষ্ট দরিদ্র মানুষের কাছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুবিধা কার ঘরে পৌছালো? সাধারন ও দরিদ্র মানুষের ঘরে নিশ্চয় নয়। সুবিধা হয়তো কিছুটা হয়েছে রাজনৈতিক মাঠে। আর সুবিধা হয়েছে কিছু অনুৎপাদনশীল ব্যবসায়ীর কাছে। বিশেষ করে যারা যান বাহন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। যার সংখ্যা খুবই কম।
তেলের দাম কমানোর সুবিধা সংখ্যাগরিষ্ট কিম্বা দরিদ্র এই দুই শ্রেণির মানুষ পাবে না।
এই দুই শ্রেণির প্রত্যক্ষ বা সরাসরি প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ডিজেল ও কোরোসিন। ডিজেল ও কোরোসিনের দাম কমানো হয়েছে চার দশমিক ৪১ শতাংশ। তুলনামুলক উচ্চবিত্তরা ব্যবহার করে অকটেন ও পেট্রোল। পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমানো হয়েছে গড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি।
আমদানি করা জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল। তারপর কোরোসিন। এরপর অকটেন।
ডিজেলে চলছে কৃষি সেচ কাজের গভীর ও অগভীর নলকূপ। এতে সরকার আগে থেকেই ভর্তূকি দিচ্ছে। আর চলছে রাস্তা ও নদী পথের যান। আর এই যানে চলছে মধ্যবিত্ত আর দরিদ্র মানুষ। যোগাযোগ মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ি লিটারে এক টাকা কমলে ভাড়া কমবে এক পয়সা। তারমানে তিন টাকা কমেছে তাতে কিলোমিটারে ভাড়া কমবে তিন পয়সা। কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমবে? এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহর অবকাশ আছে। আর কেরোসিনের ব্যবহার সেখানে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌছেনি। অথবা বিদ্যুৎ পৌছলেও কিছু এলাকার দরিদ্র জনগোষ্টি দৈনিক আলো জ্বালাতে কেরোসিন ব্যবহার করে। বড় এক জনগোষ্টি সরাসরি কোরোসিন কেনে। ফলে তারা অল্প একটু সুবিধা পেতে পারে।
ডিজেল অনেক বেশি ব্যবহার হয়। এতে দাম বেশি কমালে আয় অনেক কমে যাবে। সাথে যানবাহন ভাড়া নিয়ন্ত্রন করা যাবে না- এই অজুহাতে সরকার ডিজেলের দাম কম করে কমিয়েছে। নামে মাত্র।
অবশ্য তিন ধাপে দাম কমানোর কথা বলা হয়েছে। এটা প্রধম ধাপ। কিন্তু পরের দুই ধাপ পৌছতে সেই তাল গাছের আড়াই হাত বাকির মত হবে। কারণ ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে। আর কবে সেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ আসবে? ততদিনে না আবার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হয়।
দাম কমানোর পরেও প্রতিলিটার ডিজেল ও কোরোসিনে লাভ থাকবে ১৭ টাকা। অকটেনে ২৫ টাকা এবং পেট্রোলে ২০ টাকা। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উঠা নামার উপর এই লাভও কম বেশি হবে্।
এত বেশি লাভ থাকার পরও সামান্য কমানো হয়েছে তেলের দাম।

এই সব বিবেচনায় এই দাম কমানোকে শুধু দায় মুক্তির দাম কমানো বলা যেতে পারে। জনগণের সেবার বিবেচনায় কতটা হয়েছে তা প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও ধন্যবাদ দিতে হবে যতটুকু হয়েছে ততটুকুর।