তেলের দাম কমলেও বাড়বে গ্যাস বিদ্যুতের

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। একই সাথে কমানো হবে তেলের দাম। সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের একাধিক সহৃত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। দ্রুত সময়েই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগ ও জ্বালানি বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্যরাও এই বৈঠকে অংশ নেবেন। বৈঠকে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে না। এজন্য তেলের দাম কমানো হবে। তবে সাথে সাথে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, বিদ্যুতের দাম বাড়লেও প্রান্তিক গ্রাহকদের জন্য বাড়ানো হবে না। সিএনজি ও আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। সাথে বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যাসের দাম। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম এমনভাবে কমানো হবে যেন, আগামী ছয় মাস বা একবছর আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও বিপিসির কোন লোকসান না হয়। অর্থাৎ বিপিসিকে সন্তোষজনক লাভে রেখেই জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে।
গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর ফেব্রুয়ারি মাসে শুনানী শেষ করেছে বিইআরসি। শুনানীর পর রায় দিতে ৯০ দিনের যে বাধ্যবাধকতা তা বিদ্যুতের জন্য ৭ জুন এবং গ্যাসের জন্য ১৮ জুন শেষ হয়েছে। বিইআরসি কারিগরি কমিটি সে সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ করে রাখলেও তা ঘোষনা করা হয়নি। সরকারের নীতি নির্ধারনি পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে গ্যাস বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে তা ঘোষনা করা হবে।
দীর্ঘ দিন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ার পরও বাংলাদেশে তা কমানো হয়নি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ ডলারেরও বেশি দিয়ে একবছর আগে এই তেল কিনতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশেও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যখন দাম কমেছে তখন আর কমানো হয়নি। নতুন করে তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি তেলের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি ছিল। কিন্তু সে দাম কমলেও দেশে কমানো হয়নি।
প্রতিলিটার অকটেন ও পেট্রোল ৬৪ টাকা বিক্রি করলেই বিপিসির লাভ হয়। কিন্তু ৩৫ টাকা লাভে অর্থাৎ ৯৯ টাকায় বিক্রি করছে। একই ভাবে কেরোসিন প্রতিলিটার ১৪ টাকা, ডিজেল ১৫ টাকা, ফার্নেস তেল ২০ টাকা এবং বিমানের তেলে গড়ে লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি তিন হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে কমেছে তা কতদিন থাকবে তা এখনও অনিশ্চিত। এজন্য সেই বিবেচনায় রেখেই দাম কমানো হবে। এমনভাবে দাম কমানো হবে যেন, এখনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও বিপিসি সহজে লোকসানে না পরে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার পরে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কমানো হয়নি। তেল আমদানি ও বিপনণকারী সরকারি কর্পোরেশনও লাভ করছে। তবুও সরকার এতদিন বলে এসেছে এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে না। বিপিসি যে দীর্ঘদিন লোকসান করেছে। তার যে পুঞ্জিভুত লোকসান আছে তা কমিয়ে নিতে হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামের সাথে সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম নির্ধারন করা উচিত। গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য নয় মাস আগে বিইআরসিতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে প্রস্তাবের পর্যালোচনা শেষে নতুন দাম ঘোষনা করা হয়নি। এখন নতুন প্রস্তাব দেয়ার সময় এসেছে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে।
সূত্র জানায়, প্রান্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের (৩০ ইউনিট পর্যন্ত) দাম বাড়ানো হবে না। তবে শহরের প্রান্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের জন্য খুব সামান্য বাড়ানো হতে পারে। দীর্ঘ দিন শহর ও গ্রামের মধ্যে যে দামের পার্থক্য ছিল তা সমন্বয় করার জন্য এই দাম বাড়ানো হবে। তবে কৃষি ও সামাজিক অর্থাৎ মসজিদ মন্দিরের বিদ্যুতের দাম নাও বাড়ানো হতে পারে। বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের জন্য আগের মতই কয়েকটি ধাপ থাকছে। প্রত্যেক ধাপেই দাম বাড়বে।
জানুয়ারি মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখ শুনানীর পর বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিট প্রতি ২৪ পয়সা (৫দশমিক ১৬ শতাংশ) এবং গ্রাহক পর্যায়ে তিন দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) এক দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) দুই দশমিক ২৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। তবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে জানায় মূল্যায়ন কমিটি।
অন্যদিকে সঞ্চালন লাইনের চার্জ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর দুই থেকে পাঁচ ফেব্রুয়ারি গণশুনানী করে বিইআরসি। শুনানীর পর মূল্যায়ন কমিটি সঞ্চালন লাইনের চার্জ না বাড়ানোর সুপারিশ করে। এছাড়া তিতাস গ্যাস ট্রন্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস গ্যাস) এবং কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে জানায়। তবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির (পিজিসিএল) পাঁচ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের দাম দুই দশমিক ৪৯ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (জেজিটিডিএসএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রে সঞ্চালন চার্জ বাড়ালে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়।