জ্বালানি তেলের দাম কমলো

অবশেষে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। ডিজেল, কোরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম গড়ে সাত দশমিক ৩৩শতাংশ কমানো হয়েছে।
ডিজেল ও কোরোসিন লিটার  প্রতি তিন টাকা এবং অকটেন ও পেট্রোলে লিটার প্রতি ১০ টাকা কমানো হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম উদ্দিন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নতুন এ দাম  সোমবার থেকে কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোন দেয়ার পর আজ রোববার তেলের দাম কমানো প্রজ্ঞাপন জারি করা হল।
এখন থেকে ২৩ তিন আগে ফার্নেস তেলের দাম লিটারে ১৮টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়। তারও আগে ২০০৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল।
এই মুহুর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়তি। গত কয়েকদিন তেলের দাম বাড়ছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৩০ ডলারের নিচে ছিল তখনও কমানো হয়নি। এখন যখন ৪০ ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলারের বেশি তখন কমানো হল।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমার প্রায় দুই বছর পর দেশে তেলের দাম কমানো হল।
ডিজেল ও কোরোসিন ৬৮ টাকা থেকে লিটার প্রতি তিন টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। ডিজেল ও কোরোনসিন গড়ে চার দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। পেট্রোল ৯৬ টাকা থেকে ১০ টাকা কমিয়ে ৮৬ টাকা অর্থাৎ ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং অকটেনে ৯৯ টাকা থেকে ১০ টাকা কমিয়ে ৮৯ টাকা অর্থাৎ ১০ দশমিক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। গড়ে সাত দশমিক ৩৩ শতাংশ তেলের দাম কমলো।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) লাভ করবে। বিপিসি সূত্র জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনে তিন টাকা কমানোর পরও লিটার প্রতি লাভ থাকবে ১৭ টাকা। অকটেনে লিটার প্রতি লাভ থাকবে ২৫ টাকা এবং পেট্রোলে লিটার প্রতি লাভ থাকবে ২০ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম ২০১৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাড়ানো হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারে ওঠা নামা করছিল। তখন দেশে দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা করা হয়।
বিশ্ব বাজারের অব্যাহত পতনের মধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে শুরু করে। প্রায় দুই বছর ধরেই জ্বালানি তেলে লাভ করেছে বিপিসি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবে বিপিসি জানিয়েছে,  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বিক্রিতে লাভ হয়েছে ১০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। আর তেলের বর্তমান দাম বজায় থাকলে বিপিসি চলতি অর্থবছরে লাভ করবে ১২ হাজার কোটি টাকা।  অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ বলছে জ্বালানি তেলের দাম আগামী বছরগুলোতে বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ তুলে দেয়ার পর জ্বালানি তেলের দাম আরও কমতে পারে। এছাড়া সৌদি আরব এক তরফাভাবে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করায় আগামী কয়েক বছর জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। বলা হচ্ছে জ্বালানি তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো বাজেট ঘাটতি মেটাতে বেশি বেশি জ্বালানি বিক্রি করছে। যদিও এখন মাঝে মাঝে বিশ্ববাজারে সামান্য পরিমাণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ ফার্নেস তেলের দাম লিটার প্রতি ১৮ টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়। সে সময় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে বলে জানান।
গত ৩রা এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়। ৭ই এপ্রিল তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে, ৪৫ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৯ শতাংশ, শিল্প খাতে ৪ শতাংশ এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে সাত শতাংশ।
রোববার প্রায় দেড় ডলার বেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে ৪২ ডলার ৬৩ সেন্টে। আর ইউরোপে এ পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ ডলার ৮০ সেন্টে।

ডিজেলের দাম লিটার প্রতি এক টাকা কমলে পরিবহন ভাড়া কিলোমিটারে এক পয়সা কমবে বলে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন।

পণ্য         দাম       নতুন দাম      কমল
ডিজেল     ৬৮ টাকা    ৬৫টাকা    ৩ টাকা
কেরোসিন    ৬৮          ৬৫          ৩
পেট্রোল        ৯৬           ৮৬         ১০
অকটেন        ৯৯          ৮৯         ১০