জ্বালানি তেল আমদানিতে দফায় দফায় কর ভ্যাট

জ্বালানি তেল বহনকারী ওয়াগন - এনার্জি বাংলা

বিশেষ প্রতিনিধি:
জ্বালাতি তেল বিক্রির চার ভাগের একভাগই কর ভ্যাট। আমদানি করা তেলের বড় খরচ বন্দরেই দিতে হয়। আর এতেই খরচ বেড়ে যায় তেলের। সরকারের আয়ের অন্যতম উৎস জ্বালানি তেল আমদানি। আমদানিতে লাভ বা লোকসান যাই হোক প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা কর দিতে হয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি)। গত অর্থবছরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে।
জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতিবছর বিপিসি সরকারি কোষাগারে অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট, ডিউটি, অন্যান্য অগ্রিম কর ইত্যাদি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা দেয়। জাতীয় অর্থনীতিতে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জ্বালানি তেল আমদানিতে নেয়া হয় দফায় দফায় কর। তেলে প্রতিলিটারে ৮০ টাকার মধ্যে প্রায় ২৪ টাকায় কর ভ্যাট দিতে হয়। শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে দামের কারণে বিপিসিকে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তা নয়। জ্বালানি তেল আমদানিতে বন্দরেই এই টাকা রেখে দেয়া হয়। অকটেন বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ৮৯ টাকা। এর আমদানি মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এরসাথে ভ্যাট, ডিউটি, ট্যাক্স যোগ হয় প্রায় ৩০ টাকা।
পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ট্যারিফ ভ্যালুর উপর প্রথমে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর। এরপর ১০ শতাংশ ডিউটি এবং ট্যারিফ ভ্যালু ও ডিউটির উপরে ১৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। এছাড়া অপরিশোধিত তেলের ট্যারিফ ভ্যালুর উপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর। ৫ শতাংশ ডিউটি এবং ট্যারিফ ভ্যালু ও ডিউটির সমষ্টির উপর ১৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট দিতে হয়।
২০২১-২২ কর বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় কর সবমিলিয়ে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ ৮০ টাকায় ২৪ টাকা বন্দরেই দিয়ে আসতে হয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি প্রতিবছরই লাভ করছে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৫৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার বেশি। ট্যাক্স-ভ্যাটের বাইরে যা শুধুই মুনাফা। ট্যাক্স-ভ্যাট তো নির্ধারিত। সরকার ট্যাক্স-ভ্যাট থেকে প্রতিবছর ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পায়।
২০১০-১১ অর্থবছর যখন বিপিসি লোকসান দিচ্ছে, ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে সেই বছরও আয়কর দিয়েছে ৩৫ কোটি টাকার বেশি। এভাবে এর পরের বছর ১২৭ কোটির বেশি, পর্যায়ক্রমে ২১৯ কোটি, ২১৫ কোটি আয়কর দিয়েছে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর যখন লাভ করল তার পরের অর্থবছর (২০১৫-১৬) বিপিসি আয়কর দিয়েছে ৫১৩ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৮৬৬ কোটি, পর্যায়ক্রমে ৮২০ কোটি, ৯৯৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছর ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছে।
বিপিসি প্রতিবছর যে লাভ করছে তা এই টাকার বাইরে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর লাভ করেছে ৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা, পরের অর্থবছর ৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, পর্যায়ক্রমে ৬ হাজার ৮৪৪ কোটি, ৫ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, ৩ হাজার ৬৮০ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছর লাভ করেছে ৫ হাজার ১৫ কোটি টাকা।