জ্বালানি তেলের দাম আবার কমছে

দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমাতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এবিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে একই সাথে দ্রুত গ্যাসের দামও বাড়াতে বলা হবে বিইআরসিকে।

আজ বৃহষ্পতিবার  বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে এনার্জি বাংলাকে একথা জানান।

তিনি বলেন, লিটার প্রতি কত টাকা কমানো হবে তা আয় ব্যয় পর্যালোচনা ও আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। জ্বালানি তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া কমেনি। পরিবহন ভাড়া না কমায় প্রতিমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

ডিজেল ও কোরোসেন আমদানি করা হলেওদেশেই উৎপাদন হয় পেট্রোল। বর্তমানে মজুদ করার জায়গার অভাবে ক্ষমতার চেয়ে কম পেট্রোল উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে অপচয় হচ্ছে পেট্রোল উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি বা উপজাত কনডেনসেট। পেট্রোলের ব্যবহার বাড়ানোর জন্যও তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

এবছর এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সে সময় বলা হয় কয়েক ধাপে তেলের দাম কমানো হবে। .ডিজেল, কোরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম গড়ে সাত দশমিক ৩৩শতাংশ কমানো হয়েছিল। ডিজেল ও কোরোসিন লিটার  প্রতি তিন টাকা এবং অকটেন ও পেট্রোলে লিটার প্রতি ১০ টাকা কমানো হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমার প্রায় দুই বছর পর দেশে তেলের দাম কমানো হয়।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তেল বিক্রি করে লাভ করছে। বিপিসি সূত্র জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনে তিন টাকা কমানোর পরও লিটার প্রতি লাভ হচ্ছে ১৭ টাকা। অকটেনে লিটার প্রতি লাভ হচ্ছে ২৫ টাকা এবং পেট্রোলে লিটার প্রতি লাভ হচ্ছে ২০ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম বেশি হওয়ার সাথে এই লাভও কম বেশি হয়।

জ্বালানি তেলের দাম ২০১৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাড়ানো হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারে ওঠা নামা করছিল। তখন দেশে দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা করা হয়।
বিশ্ব বাজারের অব্যাহত পতনের মধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে শুরু করে। প্রায় দুই বছর ধরেই জ্বালানি তেলে লাভ করেছে বিপিসি।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবে বিপিসি জানিয়েছে,  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বিক্রিতে লাভ হয়েছে ১০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। আর তেলের বর্তমান দাম বজায় থাকলে বিপিসি চলতি অর্থবছরে লাভ করবে ১২ হাজার কোটি টাকা।  অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ বলছে জ্বালানি তেলের দাম আগামী বছরগুলোতে বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ তুলে দেয়ার পর জ্বালানি তেলের দাম আরও কমতে পারে। এছাড়া সৌদি আরব এক তরফাভাবে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করায় আগামী কয়েক বছর জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। বলা হচ্ছে জ্বালানি তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো বাজেট ঘাটতি মেটাতে বেশি বেশি জ্বালানি বিক্রি করছে। যদিও এখন মাঝে মাঝে বিশ্ববাজারে সামান্য পরিমাণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ ফার্নেস তেলের দাম লিটার প্রতি ১৮ টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়। সে সময় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে বলে জানান।

জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে, ৪৫ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৯ শতাংশ, শিল্প খাতে ৪ শতাংশ এবং আবাসিক ও অন্য খাতে সাত শতাংশ।

পণ্য               দাম       
ডিজেল      ৬৫টাকা
কেরোসিন   ৬৫
পেট্রোল       ৮৬
অকটেন      ৮৯