জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত জাতীয় বাজেটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রতিফলন নিয়ে আলোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা।
বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ভ্যাট ট্যাক্স বসিয়ে শতভাগ বাণিজ্যিক ভাবে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক ব্যয় আইন করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভোক্তার সাথে অন্যায় লুটপাট লুণ্ঠনের মাধ্যমে হচ্ছে, এটা উন্নয়ন নয়।
যদি বিদ্যুতে লোকসান হয়, তবে এই টাকা কোথায় যায় এসব তথ্যের স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
স্থল ও সমুদ্রে গ্যাসের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও অনুসন্ধান ও উত্তোলনে উদ্যোগ নেই। এর ফলে বিদেশ থেকে বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দুর্নীতি আর সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে জ্বালানি খাত ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ফসিল ফুয়েল থেকে ক্লিন এনার্জির দিকে ধীরে ধীরে যাওয়া উচিত।বেসরকারি খাত এখানে এগিয়ে আসবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা চাই সরকার বেসরকারি খাতকে সাহায্য করবে। কিন্তু এবার বাজেটে ভোক্তা ও বেসরকারি খাতকে যে সহায়তা করার দরকার ছিল তা পর্যাপ্ত হয়নি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি করা প্রশংসনীয়। তবে নতুন করে জ্বালানির উৎস খুঁজতে আমাদের সাফল্য নেই। আমাদের দেশীয় গ্যাস ধীরে ধীরে কমে আসছে। আদিকাল থেকে গ্যাসের উৎপাদন ক্রমাগত হারে বাড়ছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। ২০১৬ সালের পর আর বাড়েনি। ২০১৭ সালের পর থেকে এটা কমছে। এটা কমতেই থাকবে। যদি আমরা নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে না পারি, ২০৪০ সালে গ্যাস ব্যবহার একেবারে নগণ্য হয়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা না।

জ্বালানির সংকটের বিষয়টি একটি ভ্রান্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের যে গ্যাস সম্পদ আছে সেটা যথেষ্ট অনুসন্ধান না করে, গ্যাস না তুলে, আমরা অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে হাত পা বাড়িয়েছি। যত হাত পা বাড়াচ্ছি, সমস্যা তত বাড়ছে। আমরা গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান করতে পারলে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস যৌথ জরিপ করেছে। সেখানে তারা বলছে, বাংলাদেশে ৩২ টিসিএফ গ্যাস আমরা এখনো উত্তোলন করতে পারি। নরওয়ের একটি সংস্থা বলেছে, ৩২ টিসিএফ না ৪২ টিসিএফ গ্যাস এখনো রয়ে গেছে। সম্প্রতি আরেকটি সংস্থা বলছে, ৪০ টিসিএফ গ্যাস আছে। আমাদের জরিপ, বিদেশিদের জরিপ আছে। কেউ বলেনি বাংলাদেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচলক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কৃষি-সেচ ও অন্যান্য কিছু খাতে বিদ্যুতে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লোকসান করে। সেখানেই ভর্তুকি দেওয়া লাগে। বাকিদের দেওয়া লাগে না।

তিনি আরও বলেন, গ্যাসের অভাবে অন্য জ্বালানি দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। যদি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না থাকতো তাহলে প্রচুর লোডশেডিং হতো। ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভালো উৎস আছে, বাংলাদেশে সেটা নাই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য সব দরজা খুলে রেখেছি।