জলবায়ু পরিবর্তনে সব হারাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে নদী পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকায়। পাল্টে যাচ্ছে নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি। উদ্বাস্তু গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক সমস্যা।
মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানের সিক্স সিজন হোটেলে একশনএইড প্রকাশিত ‘পিপল অব ম্যানি রিভারস-টেলস্ ফ্রম দ্যা রিভার ব্যাংকস’ বইটির প্রকাশনা উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। নদীপাড়ের মানুষের বেঁচে থাকার গল্প এই বইয়ে উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অন্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিয়ন মার্গারেথ কাউলানেয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, ভারতের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর নর্থ ইস্ট স্ট্যাডিজের প্রধান ড. সঞ্জয় হাজারিকা, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অনেক নদী মরে যাচ্ছে, আমাদের কর্মকান্ডের কারণে। যার প্রভাব পড়ছে নদী পাড়ের মানুষের উপর। সমস্যা আসলে পানি বা নদীর নয়, সমস্যা আমাদের। আমরা সব জানার পরও এমন কাজ করি যার ফলে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ভাঙন একটি নীরব ক্যান্সারের মতো। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ কম, সমস্যা বেশি। তার উপর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব আছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে। ভাঙ্গন, পনি দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়াতে মানুষ সব হারাচ্ছে। এই সব হারানো মানুষের জন্য সরকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভাঙ্গন কিংবা অন্য কারণে নদীপাড়ের মানুষেরা শুধু নানা সমস্যাই পড়েন না, তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন। গেল একশ’ বছরে নেদারল্যান্ডসে আমরা নদী ও পানি ব্যবস্থাপনায় আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছি। সেটি কাজে দিচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।
বইটির সম্পাদক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই গল্পগুলো নদীপাড়ের মানুষের জীবনের। তাদের জীবনের গল্প সংগ্রহ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, ভাঙ্গনসহ নানা কারণে একটি মানুষকে ২০ বারের মত উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর উপর নির্ভরশীল। তাইতো আমরা নদীমাতৃক দেশ। নানা কারণে বিশেষ করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অপরিকল্পিত উন্নয়নধারা ও উদ্যোগ নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ড. সঞ্জয় হাজারিকা বলেন, ঝড়, বন্যা এবং ভাঙ্গন এই নদীপাড়ের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। নদী ভাঙ্গন এই এলাকার মানুষের অনেক বড় সমস্যা। এ কারণে তারা বাড়ি-ঘড় হারাচ্ছে। হারাচ্ছে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি।