ছাদে আবার সৌর প্যানেল: আবাসন ব্যবসায়ীদের না

সরকারি আধাসরকারি ভবনে আগামী দুই বছরের মধ্যে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি ভবনের ছাদেও সৌর প্যানেল বসানো হবে। এ জন্য ইডকল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে কার্যকরি পরিষদ গঠন করা হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে এই পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে আবাসন ব্যবসায়ীরা ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের বিরোধীতা করেছেন। তারা বলেন, এটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়।
রোববার বিদ্যুৎ ভবনে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) আয়োজিত ‘ছাদে সৌরবিদ্যুৎ-বাংলাদেশের জন্য টেকসই বিকল্প’ শীর্ষক কর্মশালায় একথা জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, স্রেডার চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার এনডিসি, রিহ্যাব এর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বক্তব্য করেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন  স্রেডার সদস্য ও যুগ্ম সচিব সিদ্দিক যুবায়ের।
গৃহায়ন মন্ত্রী বলেন, সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে না পারলে বুড়িগঙ্গা বাঁচবে না, ঢাকা বাঁচবেনা। এসময় তিনি স্রেডার জন্য পূর্বাচলে জমি বরাদ্দের আশ্বাস দেন।
তৌফিক ই ইলাহী বলেন, সরকারি ভবনগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি রিহ্যাবকে সৃজনশীলভাবে আবাসন তৈরী করার আহবান জানান।

solar seminar
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ৪৪ লাখ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ পারলে শহরের মানুষ কেন পারছে না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনে বেসরকারি বিনিয়োগকারিদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। জ্বালানি সাশ্রয়ি ভবন নির্মাণে স্রেডার কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে ভবনগুলো পরিবেশ বান্ধব ও পরিস্কার হবে।
প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ভবনের ছাদে প্যানেল বসিয়ে এক হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরমধ্যে সরকারি ও আধা সরাকরি ভবনের ছাদ ব্যবহার করে ৪০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ সম্ভব। বর্তমানে সরাকরি ও আবাসিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ সচিব জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা হালনাগাদ করে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৯৪৬ মেগাওয়াট এবং ২০২০ সালের মধ্যে তিন হাজার ১৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪১১ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ২৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন এবং ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প পরিকল্পনাধীন আছে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, এটি অবাসস্তব সিদ্ধান্ত। সমীক্ষায়  দেখা গেছে  ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের সিদ্ধান্তর কারণে গ্রাহক অসন্তস্টি বেড়েছে। কারণ সৌর প্যানেল স্থাপনে একদিকে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে, খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা এথেকে পূরণ হচ্ছে না। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের প্যানেল সরবরাহ করছে। ফলে সৌর বিদ্যুতের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ধারনা তৈরী হচ্ছে। তিনি বলেন, শহরে ভবনের ছাদে সৌর প্যানেলের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়ে গ্রামাঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের প্রসারে আরও কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে রিহ্যাব সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে আবাসন শিল্পের এক হাজার ২০০ উদ্যোক্তা আর্থিক সহায়তা দেবে। আবাসন ব্যবসায়ীরা প্রতিকলোওয়াট লোডের বিপরীতে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকারের নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে দিতে পারে।