গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ছে : কমছে না তেলের

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমবে না।  আবাসিক, শিল্প, সিএনজি ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যাসের দাম বাড়বে। অন্যদিকে কৃষি, সার ও গ্রামের প্রান্তিক ব্যবহারকারিদের বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। শহরের সকল গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বাড়বে। তবে তুলনামূলক কম। যারা ৬০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের বেশি হারে বাড়ানো হবে।  অন্যদের জন্য গ্রাম ও শহরের মধ্যে সমন্বয় করা হবে। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যে দাম ঘোষনা করবে তাই চূড়ান্ত হবে। আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কার্যকর করা হতে পারে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্যাস বিদ্যুতের দাম সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বৈঠকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঠিক করবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়ার জন্য বৈঠক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আপাতত কমানো হবে না। তবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের সাথে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা উচিত। আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। শিল্প উদ্যোক্তারাও দাম বাড়ানোর পক্ষে। গত এক বছরে ৩৫ হাজার ৯১৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। আবাসিক, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, সিএনজিতে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম বাড়বে। কাফকোর কাছে যে গ্যাস বিক্রি করা হয় তার দামও বাড়ানো হবে। তবে বিদ্যুৎ ও সারে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম বাড়বে না।
বৈঠক সূত্র জানায়, পল্লী অর্থাৎ আরইবি গ্রাহকদের ৬০০ ইউনিটের উর্দ্ধে যারা ব্যবহার করেন শুধু তাদের দাম বাড়ানো হবে। বর্তমানে আরইবির গ্রাহকরা অন্যদের থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। এবার এই দাম সমন্বয় করা হবে। এতে অন্য সকল বিতরণ কোম্পানির দাম বাড়বে। পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো ও ওজোপাডিকো এর প্রান্তিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪১ পয়সা করে বাড়বে। অর্থাৎ ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিট তিন টাকা ৩৩ পয়সা থেকে বেড়ে হবে তিন টাকা ৭৪ পয়সা। এছাড়া এক থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বাড়বে ৩৪ পয়সা করে। অর্থাৎ তিন টাকা ৫৩ পয়সা থেকে বেড়ে হবে তিন টাকা ৮৭ পয়সা।
সূত্র জানায়, ২০১ ইউনিট থেকে  পর্যায়ক্রমে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন ধাপে গড়ে ২৫ শতাংশ করে দাম বাড়ানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে ছয় টাকা করা হতে পারে। ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত পাঁচ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে করা হতে পারে ছয় টাকা ৫০ পয়সা এবং ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত আট টাকা ৫১ পয়সা থেকে বেড়ে করা হতে পারে ১০ টাকা। ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারিদের প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৫০ পয়সা করা হতে পারে।
আবাসিক এক চুলা এবং দুই চুলা উভয় এর দাম বাড়ছে। এক চুলা ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা এবং দুই চুলা ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হতে পারে। এছাড়া ক্যাপটিভ, শিল্প, বাণিজ্যিক ও চা বাগানে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করে বাড়ানো হবে। সিএনজির দাম বাড়ানোর সাথে সাথে সিএনজি স্টেশন মালিকদের কমিশনও বাড়ানো হবে। তবে বিদ্যুতে প্রতি ইউনিটের দাম
ছয় বছর পর গ্যাসের দাম, বাড়ানো হচ্ছে। এরআগে ১লা আগষ্ট ২০০৯ থেকে সকল গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদের ২য় সভায় ব্যবসায়ীরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ পেলে দাম বাড়ানোর পক্ষে আছেন। একই সাথে ক্যাপটিভ ও সিএনজিতে পর্যায়ক্রমে গ্যাস বন্ধ করে শিল্পে দেয়ার অনুরোধ করেছেন তারা। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে বর্তমানে মোট গ্যাসের ১২ শতাংশ এবং সিএনজিতে ৬ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়। এই পুরো গ্যাস শিল্পে দেয়ার অনুরোধ করেছেন তারা।
পরিবহনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু পরিবহন মালিকরা নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তেলের দাম কমালেও পরিবহন ভাড়া কমানো সম্ভব হবে না। তেলের দাম কমানোর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। এই চিন্তা থেকে আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমানো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। গতকালের বৈঠক এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিপিসির পুঞ্জিভূত লোকসান কমিয়ে আনতে এখনই তেলের দাম কমানো হবে না বলেও জানানো হয়।
বর্তমানে প্রতিলিটার অকটেন ও পেট্রোল ৬৪ টাকা বিত্রিক্র করলেই বিপিসির লাভ হয়। কিন্তু ৩৫ টাকা লাভে অর্থাৎ ৯৯ টাকায় বিত্রিক্র করছে। একই ভাবে কেরোসিন প্রতিলিটার ১৪ টাকা, ডিজেল ১৫ টাকা, ফার্নেস তেল ২০ টাকা এবং বিমানের তেলে গড়ে লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জ্বালানি তেল বিত্রিক্র করে বিপিসি তিন হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।
জানুয়ারি মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখ বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে গণশুনানী করে বিইআরসি। তারপর বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিট প্রতি ২৪ পয়সা (৫দশমিক ১৬ শতাংশ) এবং গ্রাহক পর্যায়ে তিন দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পনি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) এক দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) দুই দশমিক ২৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। তবে বাংলাদেশ পল­­ী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ইলেকট্রিক সাপ­াাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে জানায় মূল্যায়ন কমিটি।
অন্যদিকে সঞ্চালন লাইনের চার্জ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর ২ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি গণশুনানী করে বিইআরসি। শুনানীর পর মূল্যায়ন কমিটি সঞ্চালন লাইনের চার্জ না বাড়ানোর সুপারিশ করে। এছাড়া তিতাস গ্যাস ট্রন্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস গ্যাস) এবং কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে জানায়। তবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির (পিজিসিএল) পাঁচ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোমআনির গ্যাসের দাম দুই দশমিক ৪৯ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (জেজিটিডিএসএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রে সঞ্চালন চার্জ বাড়ালে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়।