গঙ্গা নদীতে নতুন করে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি

গঙ্গা নদীতে নতুন করে ১৬টি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। পাশাপাশি আন্তঃ সীমান্ত নদীগুলোর ওপর থেকে সব অবকাঠামো অপসারণ করারও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির হল রুমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) ও পিপলস সার্ক ওয়াটার ফোরাম বাংলাদেশ। বাপা’র নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক এ এম মুয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ও পিপলস সার্ক ওয়াটার ফোরাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিপলস সার্ক ওয়াটার ফোরাম বাংলাদেশ’র নির্বাহী সদস্য ড. এস আই খান ও বেন সদস্য ড. মাহমুদুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মতিন বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এলাহাবাদ থেকে হলদিয়ার ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা-হুগলীর উপর প্রতি ১শ কিলোমিটার অন্তর অন্তর মোট ১৬টি বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এইসব বাঁধের ফলে গঙ্গার প্রবাহে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তিনি জানান, ভারতের বিহার রাজ্যের পানিসম্পদ মন্ত্রীও এই বাঁধের বিরোধীতা করে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রস্তাবিত বাঁধগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য দিল্লীভিত্তিক “টক্সিক ওয়াচ এলায়েন্স” নামের সংগঠনটিও আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে সমীক্ষাও হয়েছে, কিন্তু তাতে প্রতিবেশ সম্পর্কে ক্ষতিকর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলে টক্সিক ওয়াচ অভিযোগ করেছে।
তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারতের বিহার-পশ্চিমবঙ্গে বর্ণনাতীত ভাবে নেতিবাচক। এই বাঁধের উজান থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নিয়ে কলকাতার হুগলী নদীতে প্রবাহিত করার মূল লক্ষ্যটি সম্পূর্নভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গঙ্গা পরিচ্ছন্নকরণ প্রকল্প, প্রস্তাবিত আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প ও হিমালয়ান নদীগুলোর প্রতিবেশ পদ্ধতি সংরক্ষণের বিষয়টি একই সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। নতুবা ভারতের উত্তরখন্ড, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিম বাংলা, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং বাংলাদেশ-অর্থ্যাৎ পুরো গঙ্গা অববাহিকা এসব প্রকল্পের ভয়াবহ ফলাফল ভোগ করবে আগামী দীর্ঘ সময়। অতএব এসব এলাকার নাগরিক আন্দোলন ও গণমূখী রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা জনগণকে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে হবে ও গঙ্গা বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ড.এস আই খান বলেন, ফারাক্কা বাঁধের ও অন্য বাঁধ তৈরির ফলে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পানি পেত এখন বাংলাদেশ তার ১০ ভাগের ১ ভাগ পানি পায়। গঙ্গা নদীর ওপর প্রায় ৪শটির মত ছোট বড় বাঁধ রয়েছে আরও ১৬টি বাঁধ নির্মিত হলে নদী আর নদী থাকবে না। আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখ নলকুপ আছে এবং প্রতি বছর ৫ মিলিমিটার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে নদীর পানি কমতে থাকলে আমাদের নিচের স্তরের পানি একদিন শেষ হয়ে যাবে।