গঙ্গায় জল সংকটে ফারাক্কায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ

জল সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে গেল এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একের পর এক পাঁচটি ইউনিট বন্ধ করা হয়। বাকি একটি চালু থাকলেও শনিবার দুপুর থেকে আর সেটিও চালানো যায়নি। এর ফলে, খানিকটা হলেও রাজ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।  কবে ফের উৎপাদন চালু করা যাবে, তা-ও অনিশ্চিত।

ডিভিসি সূত্রের খবর, বিহারে বৃষ্টির অভাবে গঙ্গার জলপ্রবাহে ঘাটতি এবং বাংলাদেশকে চুক্তি মতো বাড়তি জল দিতে গিয়েই জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ফিডার ক্যানালে জলস্তর অস্বাভাবিক রকম কমে গিয়েছে। ফরাক্কায় ২১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছ’টি ইউনিট শীতল রাখতে ফিডার ক্যানাল থেকে প্রতি ঘন্টায় দু’লক্ষ ২৫ হাজার কিউব মিটার জল লাগে। আর, তা পেতে গেলে ক্যানালে কমপক্ষে ২০ মিটার গভীর জলস্তর থাকা দরকার।

ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) মিলন কুমার বলেন, “শুক্রবার থেকে ফিডার ক্যানালে জল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। তার ফলেই জলস্তর অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করে। তার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল যাওয়ার নিজস্ব ক্যানাল কার্যত জলশূন্য হয়ে পড়েছে।’’ তিনি জানান, পরপর পাঁচটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার পরেও ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছ’নম্বর ইউনিট তাঁরা কোনও রকমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। উৎপাদন নামিয়ে আনা হয়েছিল ২০০ মেগাওয়াটে। কিন্তু জলের অভাবে বিপদের আশঙ্কা থাকায় দুপুর ১টা নাগাদ সেটিও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তাঁরা। ফরাক্কা কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি, উৎপাদনের ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে নেয় এ রাজ্য। ২০ শতাংশ পায় বিহার। বাকি বিদ্যুৎ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও সিকিম কেনে। উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা জানিয়ে এনটিপিসি সব ক’টি রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে অবশ্য দাবি করেছেন, ফারাক্কার বিদ্যুৎ না এলেও পরিষেবার কোনও ঘাটতি হবে না। যতটা প্রয়োজন, তা জাতীয় গ্রিড থেকে কিনে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, রাজ্যের নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদনও কিছুটা করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে গ্রাহকদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

graf

ডিভিসির মতে, এই সঙ্কটের এক মাত্র স্থায়ী সমাধান জলস্তর স্বাভাবিক হওয়া। কবে তা হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে ফরাক্কায় কবে ফের উৎপাদন স্বাভাবিক হবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না। জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল দেওয়া হয়। ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার বলেন, “একে ফরাক্কার গঙ্গায় জলপ্রবাহ নেই, তার উপরে এই শুখা মরসুমেও বাংলাদেশকে চুক্তি মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল দিতে হচ্ছে। ফলে এই জলসঙ্কট। ফিডার ক্যানালেও জলে টান পড়েছে। বৃষ্টি না হলে জলপ্রবাহ বাড়ার কোনও আশা নেই।”

২০১৪ সালের ২৮ অগস্ট এনটিপিসি-র ফরাক্কা–মালদহ ট্রান্সমিশন লাইনের গোলযোগে ফরাক্কার সব ক’টি ইউনিট অচল হয়ে পড়ে। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে অবশ্য তা সারিয়ে ফেলা হয়। ২০১২ সালের ৩১ জুলাইও উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে গোলযোগের ফলে সমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে দেশ জুড়ে অন্ধকার নেমেছিল। কিন্তু জলসঙ্কটে এ ভাবে সমস্ত ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি।

১ মার্চ থেকেই জলস্তর কমছিল ফিডার ক্যানালে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাইল পাঁচেক আগে আটকে কয়লা বোঝাই ১৩টি জাহাজ। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার জোগানও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “জলের অভাবে চাষিরা সেচ করতে পারছেন না। আশপাশের শহর-গ্রামেও নদী থেকে জল সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অবিলম্বে বাংলাদেশের সঙ্গে ফরাক্কা চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা উচিত ভারত সরকারের।”
সৌজন‌্যে: আনন্দ বাজার পত্রিকা