এমডিই জানেন না কীভাবে কাফকো’র গ্যাসের বিল হয়

ভবিষ্যতে গ্যাস আমদানি করলে খরচ বাড়বে – এই বিবেচনায় এখনই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে চায় বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) চলমান গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারনের শুনানীতে কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর পক্ষে এমনই যুক্তি উপস্থাপন করেছে। দাম বাড়ানোর যুক্তিতে বলা হয়েছে, সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া বিদেশী গ্যাস কোম্পানি থেকে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে লোকসান হচ্ছে। এজন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত।
তবে গ্যাসের দাম বাড়াতে এই যুক্তি যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন বিইআরসি কারিগরি কমিটিসহ ভোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনই লাভ করছে। লাভে থেকে দাম বাড়ানো প্রয়োজন নেই। সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসের যে দাম নির্ধারণ করেছে তাও যুক্তিযুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস দেশীয় শিল্পে কম দামে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু দেশের মধ্যে যে বিদেশী কোম্পানি আছে তাদেরকে আন্তর্জাতিক বাজার দরে দিতে হবে। শুধু তাদের ক্ষেত্রর গ্যাসকে সম্পদ বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
বুধবার বাখরাবাদ ও কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’র প্রস্তাবের ওপর গণশুনানী হয়। উভয় কোম্পানি ৪০ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বিইআরসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শুনানীতে কোম্পানিগুলোর পক্ষে দাম বাড়ানোর যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে বিইআরসি কারিগরি কমিটি তাদের মহৃল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। আর যুক্তি খণ্ডন বা তথ্য যাচাই করেন ভোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, রহমান মুরশেদ ও মাকসুদুল হক শুনানি গ্রহণ করেন।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (বিজিডিসিএল) এর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি জানিয়েছে,তাদের পরিচালন খরচ মেটাতে ২ দশমিক ৪৯ ভাগ দাম বাড়ানো প্রয়োজন। তবে এই কোম্পানির দেয়া হিসাব ঠিক নেই বলে জানিয়েছেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম। ক্যাব এর উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই। গণসংহতির সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকার তার নির্বাচনি ইশতেহার থেকে সরে এসে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বিইআরসি মূল্যায়ন কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, এখন কোম্পানির লাভ হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও লাভ হবে। তাই দাম বাড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই।
এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজেই জানেন না তার গ্রাহক বিদেশী কোম্পানি কাফকো’র গ্যাস বিল কীভাবে হয়। শুনানীতে তিনি বলেন, কাফকোর একজন কর্মকর্তা যেভাবে বিল করে দেন সেভাবেই মাসিক বিল তৈরী হয়। আর সেভাবেই অর্থের লেনদেন হয়। কাফকো গ্যাস নিয়ে চট্টগ্রামে সার উৎপাদন করে। বাংলাদেশ সেই সার আন্তর্জাতিক মূল্যে কেনে। সার উৎপাদনে কাচাঁমাল হিসেবে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকেও কম মূল্যে গ্যাস নেয় কাফকো।  এই কোম্পানির সাথে ভবিষ্যতে চুক্তি নবায়ন করার সময় সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান গ্রাহক সেবা বাড়ানোর তাগিদ দেন। দ্রুত সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল শোধ করার ব্যবস্থা করতে বলেন তিনি।