ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে

সরকারের বিদ্যুৎখাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেছেন, সরকার নির্বাচনি ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে কাজ করছে। স্বল্প মেয়াদে পরিকল্পনা অনুযায়ি সফল হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটু বেশি সময় লাগছে।
সম্প্রতি এনার্জি বাংলা’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
এনার্জি বাংলা: যে পরিকল্পনায় বিদ্যুৎখাত পরিচালিত হচ্ছে তা কী যথাযথ বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ হোসাইন: ২০০৯ সাল থেকে যদি ধরি তবে নির্বাচনের আগে ইশতেহারে নীতি ঠিক করা ছিল। সেখানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা ছিল। সেটার আলোকে পরিকল্পনা করে চলা হয়েছে। ইশতেহার অনুযায়ি এই সময় সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা ছিল। কিন্তু এখন উৎপাদন মতা ১১ হাজার মেগাওয়াট। ইশতেহারের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি উৎপাদন করেছি।
এনার্জি বাংলা: উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু আসল উৎপাদন কী সন্তষজনক হয়েছে?
মোহাম্মদ হোসাইন: এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাত হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। এটি রেকর্ড পরিমান উৎপাদন। গ্যাস সরবরাহ সব সময় সমান পরিমানে পাওয়া যায় না। এজন্য সব সময় এই উৎপাদন ধরে রাখা যায় না। গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে আট হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
এনার্জি বাংলা: সম্প্রতি সার্কশীর্ষ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিনিময়ে সকল দেশ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হতে পারে?
মোহাম্মদ হোসাইন: আমরা ভারত থেকে এখনই বিদ্যুৎ আমদানি করছি। নতুন আরও ৬০০ মেগাওয়াট আনার উদ্যোগ চলছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকেও বিদ্যুৎ আসবে। সার্কভূক্ত দেশে বিদ্যুৎ বিনিময়ের অনেক সম্ভবনা আছে। নেপালের সঙ্গে সমঝোতা করতে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনায় ভারতও সম্মত আছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারলে আমাদের খরচ অনেক কম হবে। জল বিদ্যুতের ক্ষেত্রে একবার বিনিয়োগ করতে হয়। পরে আর খরচ হবে না। তাই বিদ্যুতের দামও কম হবে।

mohammad hossain1
এনার্জি বাংলা: সম্প্রতি সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল। এরপর ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কী?
মোহাম্মদ হোসাইন: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অনেক পুরানো। এই ব্যবস্থাকে আধুনিক করার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলের উন্নয়ন, জেনারেশন ইউনিট এবং ফিডারের ফ্রিকোয়েন্সি রিলের মধ্যে সমন্বয় করা, এনএলডিসির সফটঅ্যায়ার প্রতি পাঁচ বছর পর পর আধুনিকায়ন করা, সফটঅ্যায়ারে প্রতিটি বিদ্যুত কেন্দ্রকে এক মিলি সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নির্ধারণ করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এনএলডিসিতে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা, জিপিএস টাইমারের ব্যবস্থা করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুত কেন্দ্রে ডিজিটাল রেকডিং প্রথা চালু করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুত কেন্দ্রে খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুত রাখা, এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র ভাগ করার ব্যবস্থা রাখা, বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে অভ্যান্তরীর ব্যবস্থা চালু রাখতে নিজস্ব জেনারেটর রাখার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এনার্জি বাংলা: পদ্ধতিগত লোকসান বা সিস্টেম লস বিদ্যুৎখাতের অন্যতম একটি সমস্যা। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে কোন উদ্যোগ আছে কিনা?
মোহাম্মদ হোসাইন: প্রযুক্তি লোকসানের মধ্যে যে অনিয়ম আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিছু অনিয়ম আছে। তবে পুরোটা নয়। উন্নত প্রযুক্তির অভাবেও কিছু লোকসান হচ্ছে। প্রযুক্তির লোকসান অনেক কমেছে। আগে ৩৫ শতাংশ লোকসান হতো। এখন তা ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ১০ শতাংশের নিচে লোকসান নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আগামী ২০১৫ সালের মাধ্যে সারাদেশে প্রিপেইড মিটার লাগানো হবে। প্রিপেইড মিটার লাগানো হলে সিস্টেম লস কমে যাবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এই লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব। একটি সার্ভারের মাধ্যমে সারাদেশে প্রিপেইড মিটার নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেটা হলে এক জায়গা থেকেই সবটা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হবে।
এনার্জি বাংলা: বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ আইন আছে তা হালনাগাদ করার কোন উদ্যোগ আছে কী?
মোহাম্মদ হোসাইন: বর্তমানে বিদ্যুৎ আইনটি অনেক পুরানো। এই আইনটি যুগোপযোগি করা প্রয়োজন। তাই সম্পূর্ণ নতুন করে বিদ্যুৎ আইন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে অনেক কিছুই হচ্ছে যা প্রচলিত আইনে পরিস্কারভাবে নেই। প্রয়োজনের তাগিদে এই খাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে এবং যেগুলো এখন চলছে সেগুলো নতুন আইনে অর্ন্তভূক্ত করা হবে। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে যেসব কাজ করেছে তার মধ্যে অনেক উদ্যোগই একদম নতুন। শত বর্ষ পুরানো বিদ্যুৎ আইনে এসবের কোনো উল্লেখ নেই। পুরানো আইন সংশোধন করে এসব সংযোজন করা সম্ভব নয়। তাই সম্পূর্ণ নতুন একটি আইন করা হচ্ছে। যেমন, বেসরকারি বিনিয়োগের বিষয়টি বর্তমান আইনে নেই। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা এখন শুধু বিইআরসি এর আছে। কোন প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলে দাম বাড়াতে পারবে না। আবার বিদ্যুতের অনেক কোম্পানি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ আইনে এ কোম্পানির বিষয়ে কিছু নেই। এ বিষয়গুলো নতুন আইনে আনা হবে।
এনার্জি বাংলা: সব মিলিয়ে আপনারা বিদ্যুৎখাতের অগ্রগতি নিয়ে সন্তষ্ট কিনা?
মোহাম্মদ হোসাইন: বিদ্যুৎখাতে আগামী ছয় বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। বড় বড় অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। স্বল্প মেয়াদে সরকারের ইশতেহার অনুযায়ি যা করার সবই করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তয়নে একটু পিছিয়ে গেছে। কিন্তু তা খুব বেশি পেছানো নয়। বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যরকম গতি আসবে।
এনার্জি বাংলা: ধন্যবাদ আপনাকে।
মোহাম্মদ হোসাইন: আপনাকেও ধন্যবাদ।