ইউরোপীয় দেশগুলো জ্বালানী সংকট কাটিয়ে উঠতে বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের মুখোমুখি

ভয়েস অফ আমেরিকা:
জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ান শহরের কাছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ ও গ্যাস কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি এই প্রাকৃতিক-গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৬ই মে, ২০১৫, ছবি-রয়টার্স
জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ান শহরের কাছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ ও গ্যাস কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি এই প্রাকৃতিক-গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৬ই মে, ২০১৫, ছবি-রয়টার্স
শেয়ার করুন

Print

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইউরোপ অভুতপূর্ব সংকটের সম্মুখীন হয়েছে , উত্তর গোলার্ধে শীত আসার সাথে সাথে ইউরোপের জনগণ উষ্ণ থাকতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

নির্বাচনী প্রভাব এবং মূল্যবৃদ্ধির ফলে আরও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে, এসব নিয়ে রাজনীতিবিদরাও উদ্বিগ্ন।

প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ মূলত এশিয়ায় চাহিদা বৃদ্ধি এবং ইউরোপে কম সরবরাহ, যার ফলে পাইকারি গ্যাসের দাম বিস্ময়করভাবে ২৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের দামও ঊর্ধ্বমুখী কারণ এই মহাদেশ জুড়ে বিদ্যুতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উৎপাদন করতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়।

ইউক্রেনের পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের চালান বাড়ানো থেকে বিরত থাকার মস্কোর সিদ্ধান্ত সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ফলে রাশিয়া তার ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের জ্বালানী চাহিদাকে ব্যবহার করে তাদের জিম্মী করেছে এমন দাবী জোরদার হয়েছে।

কিছু ইউরোপীয় রাজনীতিকের অভিযোগ যে ক্রেমলিন ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের জ্বালানি সংকটকে আরও খারাপের দিকে নিচ্ছে। তাদের মতে সদ্য সমাপ্ত নর্ড স্ট্রিমের দুটি গ্যাস পাইপলাইনের সার্টিফিকেশন দ্রুততর করার জন্য এটি ক্রেমলিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চাপ দেবার একটি কৌশল। এই দুটি পাইপলাইন ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে গেছে।

গ্যাস রপ্তানি বাড়াতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আইইএ বিশ্বাস করে যে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাসের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য আরও কিছু করতে পারে এবং আসন্ন শীত মৌসুমে উষ্ণ রাখার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্যাস সঞ্চয় নিশ্চিত করতে পারে।”

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বোয়ারকা গ্রামে রাশিয়া থেকে আসা প্রধান গ্যাস পাইপলাইনে একটি গ্যাস প্রেসার গেজের কাটা শূন্যে দেখা যাচ্ছে। ছবি-এপি
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বোয়ারকা গ্রামে রাশিয়া থেকে আসা প্রধান গ্যাস পাইপলাইনে একটি গ্যাস প্রেসার গেজের কাটা শূন্যে দেখা যাচ্ছে। ছবি-এপি
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মস্কোকে গ্যাস রপ্তানি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা আমোস হচস্টাইন এই সপ্তাহে ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেছেন “বাস্তবতা হল, ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপে সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা সম্পন্ন পাইপলাইন রয়েছে। রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে​যে এর মাধ্যমে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব, তাই যদি সত্য হয়, তাহলে তাদের উচিত, ইউক্রেনের মাধ্যমে তা দ্রুত সম্পন্ন করা।”

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কিছু সদস্য চায় ইউরোপীয় কমিশন রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রমের তদন্ত করুক। আইনপ্রণেতাদের একটি দল চিঠিতে বলেছে “আমরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে গাজপ্রমের সম্ভাব্য ইচ্ছাকৃত বাজার সুবিধা নেয়া এবং ইইউ-র প্রতিযোগিতার বিধি লঙ্ঘনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হোক ”।

মস্কো ছাড়াও ইউরোপ জ্বালানী সংকটের মুখোমুখি হবে, যেটি কারখানা এবং ব্যবসায়ের উৎপাদন হ্রাস এবং খাদ্য ঘাটতির জোরালো ইংগিত দিচ্ছে।

ব্রিটেনে, পাইকারি গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রীরা শিল্প প্রতিনিধিদের সাথে জরুরি আলোচনা করছেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছিল বিশ্বব্যাপী উচ্চ চাহিদা, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা এবং সৌর ও বায়ু শক্তির প্রত্যাশার চাইতে কম উৎপাদন।

সাতটি ব্রিটিশ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গত ছয় সপ্তাহে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলশ্রুতিতে পাইকারি গ্যাসের দাম শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই ৭০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। আশঙ্কা রয়েছে যে আরও তিনটি সরবরাহকারী দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে।

তা সত্ত্বেও, ব্রিটিশ ভোক্তারা এই শীতে মূল্য বৃদ্ধির মুখোমুখি হবেন পরিবার প্রতি কয়েক শত ডলার পরিমাণ। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলিকে রাষ্ট্র-সমর্থিত ঋণের প্রস্তাব প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছেন যাতে তারা শক্তির উচ্চমূল্যের ধাক্কা থেকে রক্ষা পেতে পারে।

অন্যান্য ইউরোপীয় সরকারগুলিও বিবেচনা করছে যে কীভাবে বাড়িঘর উষ্ণ এবং আলোকিত রাখা যায় এবং শীতকালে কারখানাগুলি চালানোর জন্য জ্বালানী বাজারে হস্তক্ষেপ করা যায়। তারা ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রভাবের আশঙ্কাও করছে, যদি গৃহস্থালির খরচে হঠাৎ পরিবর্তন আসে। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্যের কথাও বিবেচনা করছে।
জ্বালানি সংকট এই মহাদেশের মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধারকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে এমন আশংকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি মন্ত্রীরা এই সপ্তাহে জাতীয় কর্মসূচী কি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবেন।