বিশেষ প্রতিনিধি:
সুইফটের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সাথে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থ লেনদেনে কোন সমস্যা হবেনা।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নিমাণে বিরূপ প্রভাব পড়বে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান এনার্জি বাংলাকে একথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞান সচিব বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে রাশিয়া আর বাংলাদেশ ছাড়া তৃতীয় কোন পক্ষের সংশ্লিষ্ঠতা নেই। বিনিয়োগ, ঠিকাদার, যন্ত্র তৈরি সব রাশিয়া করছে। সুতরাং ঋণের যখন যে অর্থ ছাড় হচ্ছে তখন রাশিয়া ওখান থেকেই নিয়ে নিতে পারছে। অতীতেও এই লেনদেনে সুইফটের প্রয়োজন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। তাই রাশিয়ার উপর সুইফটের যে নিষেধাজ্ঞা তাতে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব যে বিনিয়োগ তা লেনদেনে সুইফটের প্রয়োজন। এর পরিমান কম। এর বিকল্প খোঁজার আলোচনা চলছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কোন তাগাদা নেই বলে তিনি জানান।
রূপপুর প্রকল্পের বিপরীতে চলতি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে খরচের একটি অংশ রাশিয়ায় পাঠানোর সময় নির্ধারিত আছে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট অর্থের ৯০ শতাংশ বা এক লাখ এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাশিয়া থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। আবার কেন্দ্রের ঠিকাদারও রাশিয়ার। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে যন্ত্র তাও তৈরি হচ্ছে রাশিয়ায়। এখানে তৃতীয় কোন দেশের সংশ্লিষ্ঠতা নেই। সবই রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই রাশিয়া থেকেই এর সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হয়। এতে সুইফট এর নিষেধাজ্ঞার জন্য অর্থ লেনদেনে সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে যে ১০ শতাংশ বা ১১ হাজার ৩০০ কোটি বিনিয়োগ করছে তার জন্য সুইফটের প্রয়োজন। সুইফটের নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ১০ শতাংশ থেকে যে খরচ করা হত তা আটকে গেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের বিনিয়োগের অল্প কিছু অর্থ এখনও রাশিয়াকে পরিশোধ করা যায়নি।
বিজ্ঞান সচিব জিয়াউল হাসান এনার্জি বাংলাকে এবিষয়ে জানান, অর্থ দিতে না পারার জন্য রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ বা তাগাদা নেই। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে। বিকল্প ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ দেয়া হবে। এরজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজের কোন ক্ষতি হবে না।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এখন পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেকের কিছু কম খরচ হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে মোট এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এরমধ্যে ৪৪ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত এতে খরচ হয়েছিল মোট বিনিয়োগের ৩৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। আর এর পরে আরও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় অর্ধেক অর্থ যেমন বিনিয়োগ হয়ে গেছে তেমনই অবকাঠামোও প্রায় অর্ধেক শেষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এপর্যন্ত ৪৫ দশমিক ৪৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
রাশিয়ার ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি) এর মাধ্যমে এতদিন বাংলাদেশ অর্থ পাঠাত। আর বাংলাদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ পাঠানো হত। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম সুইফটের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে রাশিয়ার এই ব্যাংক। সুইফটের নিষেধাজ্ঞায় পড়া রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে আপাতত লেনদেন করতে নিষেধ করেছে। বাংলাদেশ যদি রূপপুর প্রকল্পের অর্থ বিলম্বে পাঠায়, তাহলেও কোনো বিলম্ব ফি দিতে হবে না বলেও তারা জানিয়েছে।
রাশিয়া ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। এরপর পশ্চিমা দেশগুলো একজোট হয়ে রাশিয়ার ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি নিষেধাজ্ঞা সুইফট লেনদেন ব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়া। ১২ই মার্চ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের সঙ্গে যুক্ত।
রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের মধ্যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথমটি উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালে। অন্যটি পরের বছর।
সম্প্রতি আইএইএ এর প্রতিনিধি দল রূপপুর পরিদর্শন করেছে।