সাশ্রয়ের উদ্যোগ প্রশংসার, তবে…
সম্পাদকীয়:
সাশ্রয়ের যে উদ্যোগ তা অবশ্যই প্রশংসার। এই উদ্যোগ টেকসই করতে আরও উপায় বের করতে হবে।
করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। এতে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দামের লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই ব্যয়-সাশ্রয়ের নীতি নেয়া হয়েছে।
রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
গ্যাসের সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। উচ্চ দামের কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না। এই সংকট আরও বাড়বে।
ডলার জোগান দিতে না পারার কারণে ডিজেলের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তাই ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ।
সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আলোকসজ্জা বন্ধ করা হয়েছে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট কমানো হয়েছে। সাশ্রয়ের জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব সাময়িক। কিন্তু এই সাময়িকের কিছু শিক্ষা চলমান রাখতে হবে। পরিস্থিতি ভাল হলেও সাশ্রয়ী হওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
সব সংকটের মধ্যে উৎপাদন ঠিক রাখতে হবে। অন্য সব কাটছাঁট করলেও শিল্প আর কৃষিতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি দিতে হবে।
কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি সেচ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। শিল্প উৎপাদন বিঘ্ন হলে, কৃষি উৎপাদন বিঘ্ন হলে তার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা কঠিন হবে।
আমাদের এই সংকটের অন্যতম কারণ ডলার। ডলার সংকট। আমদানি খরচ মেটাতে ডলারের রির্জাভ কমে যাচ্ছে। আর আমদানির বেশিরভাগ খরচ হচ্ছে জ্বালানিতে। এটা চিন্তার। তবে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এটা আশার কথা। মানে উৎপাদনে বিনিয়োগ হচ্ছে। ক’দিন পরেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
জ্বালানি সংকট স্বাভাবিক হতে আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা। সেপ্টেম্বর নাগাদ জ্বালানির চাহিদা কিছুটা কমবে। সেই বিবেচনায় এই আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কোন অবস্থায় থাকবে তা অনিশ্চিত। বিশ্ববাজারে তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির কবে কমবে তা অনিশ্চিত।
তাই ডিজেল এবং গ্যাসের ব্যবহার কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো বা লোডশেডিংসহ নানা ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে হবে। একেবারে না থাকার চেয়ে একঘণ্টা লোডশেডিং ভাল।
এখন আমন ধান চাষের সময়। এখনই আমনের জমিতে সেচের জন্য ডিজেল বা বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেচ ঠিক মত না হলে আমন উৎপাদন কম হবে। আর আমন উৎপাদন কম হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে খাদ্যে। এটি খুবই স্পর্শকাতর। এর ব্যবস্থাপনা সতর্কতার সাথে করতে হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। তাই সর্তক থাকার বিকল্প নেই।
টেকসই ফল পেতে সাশ্রয়ের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার সাথে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক ব্যয়, অনিয়ম, অস্বচ্ছতা বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুতের যে অপচয় হয় তা রোধ করতে পারলে দুশ্চিন্তা কমবে।