শেওলা থেকে জ্বালানি

নগরের বর্জ্য পানিতে শেওলা ভালো জন্মায়। আর এই জলজ জীবসত্ত্বা ভালো ছাঁকনি বা ফিল্টারের কাজ করতে পারে। বর্জ্য পানিতে তেলসমৃদ্ধ শেওলা বেশি পরিমাণে উৎপাদনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক একসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান করেছেন। ওই শেওলা থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদন করা হয়। আর একই প্রক্রিয়ায় বর্জ্য পানি থেকে দূষিত উপাদান অপসারণ করা যায়।
অ্যালজি সাময়িকীতে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ময়লা পানি থেকে ৯০ শতাংশ নাইট্রেট ও ৫০ শতাংশ ফসফরাস উপাদান শেওলার সাহায্যে অপসারণ করা সম্ভব। বর্জ্য পানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রগুলো থেকে এ দুটি দূষণ উপাদান অপসারণ করার সহজ উপায় বের করার জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন। এবার সেটি পাওয়া গেল।
কৃষি ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পানিতে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রেট ও ফসফরাস থাকে। এগুলোকে নদ-নদী ও সাগরে বেশি শেওলা জন্মানোর জন্য দায়ী করা হয়। শেওলা থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনে গবেষকদের সাফল্যের অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। ওই গবেষক দলের প্রধান এবং রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, শেওলা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির প্রসঙ্গটি কৃষিক্ষেত্রে গত পাঁচ বছর আগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ওষুধ, সম্পূরক পুষ্টি, প্রসাধনী ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে শৈবাল বা শেওলা ক্রমেই তুলনামূলক কম ভূমিকা রাখায় এগুলো সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ কমতে থাকে। কিন্তু পরিত্যক্ত পানি থেকে শেওলার সাহায্যে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের গবেষণায় সাফল্যের ফলে টেকসই কৃষি উন্নয়নের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। শেওলা বেশি হলেও সেগুলো থেকে ‘সবুজ’ বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বা বিকল্প জ্বালানি তৈরির ক্ষেত্রে আরও অগ্রসর হওয়া যাবে।
মীনাক্ষী আরও বলেন, জৈব জ্বালানি উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি লাভজনক হবে কি না, নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে তাঁদের সর্বশেষ পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টায় আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে শেওলা উৎপাদন করা এবং বর্জ্য পানিকে তুলনামূলক বেশি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। যদি তাপমাত্রার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শেওলা উৎপাদন করাটা অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভজনক হবে।