রাশিয়া থেকে ভারত যে কম দামে তেল নিচ্ছে সে সুবিধা বাংলাদেশ কী পাবে?
ভারত থেকে পাইপলাইনে আগামী মাসেই আসছে ডিজেল
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তঃদেশীয় পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তেল আসা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে তেল আমদানি করছে। জানুয়ারি মাসে ভারত বিশ্ববাজার থেকে যত তেল কিনেছে, তার ২৮ শতাংশই কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। অথচ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এক বছরে তা ২৮ শতাংশে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে রাশিয়া ভারতকে তেল দিচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছেন, বর্তমানে ভারত রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে তেল কিনছে। ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নিচে রাশিয়া তেল কিনছে। গত বছর রাশিয়ার পর ভারতে শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ছিল ইরাক ও সৌদি আরব। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বাড়ানোয় ওপেকভূক্ত দেশের কাছ থেকে কেনা কমিছে। ২০০৮ সালে ভারত ৮৭ শতাংশ তেল কিনেছে ওপেকের কাছ থেকে, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশে। জানুয়ারিতে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে দিনে ১৪ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে। যা রেকর্ড।
ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ভারত জি-৭ এর বেঁধে দেওয়া দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের চেয়ে ১৫ ডলার কম মূল্যে রাশিয়ার তেল কিনছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি গড়ে ৮০ ডলারে তেল বিক্রি হচ্ছে।
রাশিয়া থেকে ভারত নভেম্বরে দৈনিক গড়ে ৯ লাখ ৯ হাজার ৪০৩ ব্যারেল আমদানি করেছে। অক্টোবর মাসে করেছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬ ব্যারেল। ডিসেম্বরের আগে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির রেকর্ড হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। সেই মাসে ভারত দিনে গড়ে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ ব্যারেল আমদানি করেছিল।
ভারত যে কম দামের সুবিধা পাচ্ছে তা বাংলাদেশ পাবে কিনা জানতে চাইলে বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ-ভারত পাইপে তেল আমদানি রপ্তানির চুক্তি করেছে। আর রাশিয়ার যে তেল ভারত আমদানি করছে সেই তেল বাংলাদেশে দেবে কিনা তা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তাই আপাতত সে সুবিধা পাওয়া-না-পাওয়া নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশেরও রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল নেওয়ার সুযোগ ছিল। রাশিয়া প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার তেল শোধনের মতো সক্ষমতা নেই বাংলাদেশের। তাই সে তেল নিতে পারছে না। এখন ভারত যদি রাশিয়ার অংশের তেল শোধন করে বাংলাদেশে রপ্তানি করে, তাহলে কিছুটা হলেও সুবিধা পেতেও পারে। তবে সে তেল আদৌ বাংলাদেশ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত।
২০২০ সালের প্রথমদিকে বাংলাদেশ-ভারত জ্বালানি তেল সরবরাহেরজন্য পাইপলাইন নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।
পাইপলাইনের জন্য ভারত থেকে প্রায় ৩.৪৬ বিলিয়ন রুপি ঋণ নেয়া হয়। ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্যে এবং ৫ কিলোমিটার ভারতে। পাইপলাইনটি পঞ্চগড়, নীলফামারী এবং দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত যাবে।
পাইপলাইনের কার্যক্রম শুরু হলে বাংলাদেশ রেলপথে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি বন্ধ করে দেবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে।
বিপিসি ১৫ বছরের জন্য ভারত থেকে ডিজেল কিনতে চুক্তি করেছে। ব্যারেল প্রতি ৫ টাকা ৫০ পয়সা প্রিমিয়ামসহ আন্তর্জাতিক বাজার দরে নিদির্ষ্ট নিয়ম বা সূত্র অনুযায়ি ডিজেলের দাম ঠিক হবে। জ্বালানি পরিবহনের খরচ এবং বাষ্পীভবনের ক্ষতি প্রিমিয়াম থেকে নেয়া হবে।
ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি করে সময়, খরচ এবং ঝামেলা কমবে বলে জানিয়েছে বিপিসি।
প্রাথমিকভাবে, এই পাইপলাইন দিয়ে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন ডিজেল আসবে। ধীরে ধীরে পাঁচ বছরের মধ্যে ৪ লাখ টন আনা হবে। পর্যায়ক্রমে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন তেল আমদানি করা হবে।
ভারতীয় এই ডিজেল দেশের কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় সরবরাহ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে ডিজেলের চাহিদা ১০ লাখ টনের বেশি।
দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৫০ লাখ টন। যা বেশিরভাগই আমদানি করা হয়। ৫ লাখ টন ডিজেল আসে অভ্যন্তরীণ অশোধিত তেল পরিশোধন করে।
বাংলাদেশ এর আগে ভারত থেকে ২০০৭ সালে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড থেকে ৩ হাজার ৫০০ টন ডিজেল এবং ২০০৫-০৬ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি লিমিটেড থেকে প্রায় ৪০০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করেছিল।