রামপাল থেকে বিপুল পরিমাণ পারদ সুন্দরবনে ফেলা হবে

সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বছরে কমপক্ষে ৬৫ লিটার পারদ সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হবে। এক চামচ পারদ কোনো মাটিতে ফেললে তা বিষাক্ত হয়ে যায়। আর ওই বিপুল পরিমাণে পারদ সুন্দরবনের মতো জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংবেদনশীল স্থানে ফেললে এর অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনে জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘সরকার কোম্পানির মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির জবাবে আলোচনা সভা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহবুব সুমন। মপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে সাড়ে চার কোটি লিটার গরম ও দূষিত পানি সুন্দরবনে ফেলা হবে। এতে সুন্দরবনের আশেপাশের নদীগুলোর পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
সভায় জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের ভূখণ্ডে যেসব গ্যাস কূপ আছে, তা বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ইজারা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কূপ খনন না করে ছয়-সাত বছর পর চলে যাচ্ছে। ফলে দেশের গ্যাস সম্পদ বাদ দিয়ে সরকার কয়লার দিকে ঝুঁকছে, যা সুন্দরবনের মতো প্রাণসম্পদে ভরপুর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে। তিনি বলেন, যাঁরা বলেন সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের ওপরে আস্থা রাখুন, তাঁদের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। কিছু দালাল পরামর্শক এনে রামপাল প্রকল্পের পক্ষে মিথ্যা তথ্য দেয়া হচ্ছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল প্রকল্পের আশপাশের জমিতে এরইমধ্যে সরকারি দলের লোকজন ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ১৫০টি শিল্প প্রকল্পের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন চলছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রামপাল প্রকল্পের প্রতি ইউনিটের যে বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে, তা স্বাভাবিক দরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। ফলে আর্থিকভাবেও রামপাল প্রকল্প লোকসানি হবে।
অন্যদের মধ্যে প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান এবং গবেষক মাহা মির্জা।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি বাতিলের দাবিতে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে ২০ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এ দিন সারা দেশের সব শহীদ মিনারেও এ কর্মসূচি পালন করা হবে।