কয়লা বিদ্যুৎ: রামপাল মাতারবাড়ি ছাড়া অগ্রগতি নেই

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে শুধু বাগেরহাটের রামপাল ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ি’র কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই দুই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। অর্থ সংস্থান করতে না পারার কারণেই অন্য কেন্দ্রগুলো স্থাপনের কোনো অগ্রগতিই নেই।
রামপালে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি এবং মাতারবাড়িতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (জাইকা) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। দুই কেন্দ্র থেকে দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জমি ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরের মধ্যে এই কেন্দ্র স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করার কথা। এ কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা।
অন্যদিকে মাতারবাড়িতে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাইকা।
এছাড়া আরও ১০টি কয়লাভিত্তিক (আইপিপি) বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনটির চুক্তি হলেও ৭টির চুড়ান্ত চুক্তি এখনও হয়নি।
১০টি কেন্দ্রের মধ্যে অরিয়ন গ্রুপই পেয়েছে ৬টি। প্রাথমিকভাবে মোট এক হাজার ৮৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেয়া হয়। কেন্দ্র তিনটি হচ্ছে মাওয়া ৫২২, খুলনা ২৮২ এবং চট্টগ্রামে ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফায় দেয়া তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে চট্টগ্রামের কেন্দ্রটি কয়লা পরিবহনের সুবিধার জন্য খুলনার লবনচরায় করার প্রস্তাব দিয়েছিল অরিয়ন। তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে জমি ভরটের কাজ চলছে।
১০টির মধ্যে বাকী ৪টি কেন্দ্রের চট্টগ্রামে ৬১২ মেগাওয়াট করে দুটি করবে এস আলম গ্রুপ, বাঁশখালিতে ৬০০ মেগাওয়াট বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও চট্টগ্রাম ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিএসআরএম। এই চারটি কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত চুক্তি হয়নি। বার বার সময় পেছানো হচ্ছে।
এর বাইরে মালয়েশিয়া, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ মালিকানায় আলাদা আলাদা তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়ার সঙ্গে মহেশখালী-১৩২০ মেগাওয়াট, চীনের সঙ্গে পটুয়াখালী-১৩২০ মেগাওয়াট ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পটুয়াখালী-১৩২০ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র স্থাপনে রামপালের মতো যৌথ কোম্পানি গঠন করে কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ কেন্দ্রগুলো স্থাপনে এখন পর্যন্ত শুধু সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, রামপালের অগ্রগতি সন্তোষজনক। মাতারবাড়িতে স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজের অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় গ্যাসের পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভিশন- ২০২১ সালের বিদ্যুতের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে আমদানি করা কয়লা দিয়ে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করা হবে। যার অর্ধেক দেশীয় ও আমদানি করা কয়লা দিয়ে।