রহস্যময় গোলাকার ফসিলের রহস্যের সমাধান হতে যাচ্ছে

ফসিলগুলো পৃথিবীর প্রথম যুগের আদি উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ফসিলগুলো নিয়ে প্রায় ষোল বছর ধরেই গবেষণা হচ্ছে। নাম মেগাস্পেয়ারা। একেক সময় এগুলো সম্পর্কে এক এক ধারণা পোষণ করা হলেও যিনি এই ফসিলের প্রথম অনুসন্ধান পেয়েছিলেন সেই সুহাই জিয়াও নতুন এক গবেষণায় এই ফসিলগুলো সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন। জিয়াও ব্ল্যাকসবার্গের ভার্জিনিয়া টেকের একজন জিও বায়োলজিস্ট।
তিনি অদ্ভুত এই ফসিলগুলো ১৯৯৮ সালে খুঁজে পেয়েছিলেন দক্ষিণ চীনে। কালো পাথর ভেঙ্গে তার স্তরে এই ফসিলগুলোর নমুনা খুঁজে পান তিনি। এবং এরপর থেকে তিনি এগুলো নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেন। তখনই তিনি ধারণা করছিলেন এগুলো কোন প্রাণীর ভ্রূণ বলে। এই ভ্রƒণগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র দশমিক সাত মিলিমিটার। দীর্ঘ ষোল বছরের গবেষণা শেষে জিয়াও এবং তাঁর টিমের গবেষকরা এখন প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই ফসিলগুলো আদি প্রাণের নমুনা বহন করছে। বিতর্কিত এই ফসিলগুলোর কোষ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর ধরে পাথরে রক্ষিত হয়ে আছে। গবেষণাপত্রে জিয়াও বলেন, ‘এই ফসিলগুলো দেখতে ব্যাকটেরিয়ার মতো নয়, আবার এককোষীও অনুজীবও নয়।’
এই ফসিলগুলোর কোষগুলো খুবই জটিল এবং একটির সঙ্গে অন্যটির বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। ফসিলগুলো বহুকোষী জলজ উদ্ভিদ অথবা প্রাচীন প্রাণীদের ভ্রূণ বলে ধারণা করছেন জিয়াও । তিনি এই বিষয়ে বলেন, ‘এই ফসিলগুলো গুরুত্বর্পূণ এই কারণে যে আমাদের কাছে এখন সরাসরি কিছু প্রমাণ আছে যে, কিভাবে এক কোষী প্রাণীগুলো বিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রাণী ও উদ্ভিদে রূপান্তরিত হয়েছে।’
জিয়াও ও তাঁর টিমের গবেষকরা মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে দেখতে পান যে এগুলোর মধ্যে বহুমুখী কোষ রয়েছে। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটি লেগে আছে। কিন্তু একটি থেকে অন্যটি আকার-আকৃতির দিক দিয়ে ভিন্ন। জিয়াও এ বিষয়ে বলছেন, ‘কোষগুলোর ভিন্নতা ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদন করত। এই রকম জটিল বহুমুখী কোষ ব্যাকটেরিয়া অথবা প্রোটিস্টের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ এই ফসিলগুলো এককোষী প্রাণী থেকে বহুমুখী প্রাণীতে রূপান্তরিত হওয়ার নমুনা বহন করছে। এগুলোর দেহে জলজ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এই ফসিলগুলো আদি প্রাণের উৎস বহন করছে বলেই জিয়াও এবং তাঁর দল মনে করছে। আদি প্রাণ নিয়ে গবেষণায় জিয়াও ও তাঁর টিমের গবেষকদের কালো পাথরের মাঝে পাওয়া এই মেগাস্পেয়ারা ফসিলগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে।