মাটির গভীরে বিপুল জলরাশি
পৃথিবীর বিপুল জলাধারের খোঁজে মহাসাগর বা মেরু অঞ্চলের বরফরাশি নয়, যেতে হবে অন্য কোথাও৷ সেটা ভূ-অভ্যন্তর৷ বিজ্ঞানীরা গত শুক্রবার বলেছেন, ভূ-পৃষ্ঠের অনেক গভীরে, ৪১০ কিলোমিটার থেকে ৬৬০ কিলোমিটারের মধ্যে বিপুল পরিমাণ পানির মজুদ রয়েছে৷ তবে তা পাথুরে আবরণে বন্দী হয়ে আছে৷
কিন্তু সেই পানি আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে না৷ কারণ ভূ-অভ্যন্তরের গভীরের পানি তরল নয়, এমনকি বরফ বা বাষ্পের মতো পরিচিত রূপেও নেই সেই পানি৷ খনিজ পদার্থের আণবিক কাঠামোর মধ্যে সেই বিপুল জলরাশি অনেকটা স্পঞ্জের মতো আটকে রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভ জ্যাকবসেন বলেন, সব মহাসাগরের পানি একত্র করলে যে পরিমাণ পানি হবে, ভূ-অভ্যন্তরে মোট পানির পরিমাণ সম্ভবত আরও বেশি৷ এই তথ্য জানার পর পৃথিবী সম্পর্কে তাঁদের সার্বিক ধারণা পাল্টে গেছে৷
জ্যাকবসেন আরও বলেন, পৃথিবীর গভীরতম স্থানে যে পানি রয়েছে, তা মোটেও তরল নয়৷ শত শত কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত পাথরের ওজন এবং এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অতি উচ্চ তাপমাত্রায় সেই পানির উপাদানগুলো ভেঙে যায়৷ আর সেই পানি সহজলভ্যও নয়৷ এটিকে কোনোভাবেই পানির উৎস বলা যাবে না৷ সেখানকার পানি বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সঙ্গে মিশে গভীরে চলে গেছে৷ যখন সেই পানি গভীর স্থানে পৌঁছায়, তার উপাদানগুলো জলবিয়োজন (ডিহাইড্রেশন) প্রক্রিয়ায় ভেঙে যায় এবং মুক্ত হয়ে ম্যাগ্রামস গঠন করে৷
পানির এ ধরনের ‘গলন প্রক্রিয়া’ পৃথিবীর অগভীর স্তরের আবরণে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার৷ আর অনেক আগ্নেয়গিরির ম্যাগ্রামের উৎসও তাই৷ সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীর গভীরে ওপরের দিকের আবরণ এবং নিম্নতর স্থানের আবরণের মাঝামাঝি ‘পরিবর্তন অঞ্চল’ তৈরিও হয়েছে ওই গলন প্রিক্রয়ায়৷
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত দুই হাজারেরও বেশি সিসমোমিটারে (ভূ-ত্বকের গতি ও পরিবর্তন নির্ণায়ক যন্ত্র) সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং গবেষণাগারের পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফল ওই গবেষণা নিবন্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ জ্যাকবসেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ব্র্যান্ডন শুমান্ডট যৌথভাবে ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন৷ ব্রাজিলে ভূ-ত্বকের অনেক গভীরে সম্প্রতি এক ধরনের হীরা পাওয়া যায়, যা বাণিজ্যিকভাবে খুব মূল্যবান নয়৷ সেই হীরার অবস্থান ভূ-অভ্যন্তরে আটক জলাধারের মধ্যে৷ গবেষকেরা এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখছেন৷ সূত্র: রয়টার্স