ভারতে ১৮ বছরে বণ্টন করা সব কয়লা ব্লক অবৈধ

ভারতে গত ১৮ বছরের সব কয়লা ব্লক বণ্টন অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বণ্টন করা ব্লকগুলো এর আওতায় পড়েছে। সোমবার ঐতিহাসিক এ রায় দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বরাদ্দ করা ২১৮টি লাইসেন্স বাতিল করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নতুন করে নিরীক্ষণ চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন আদালত। খবর এনডিটিভি, এএফপি ও বিবিসি।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে স্ক্রিনিং কমিটির সিদ্ধান্তে কোনো ‘আইনি স্বচ্ছতা ছিল না’। নেহাতই দায়সারাভাবে পরিচালিত হয়েছিল গোটা প্রক্রিয়াটি। রায়ের ফল পর্যবক্ষেণের লক্ষ্যে আগামী ১ সেপ্টেম্বর আবারও শুনানি হবে। এ রায়ের ফলে ঘাটতিতে থাকা দেশটির জ্বালানি খাত আরেক দফা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ল। কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে মূলত দুর্নীতির অভিযোগের মুখ পড়ে বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-২ সরকার। কিন্তু গতকালের সর্বোচ্চ আদালতের এ
রায়ের ফলে ভারতের সব প্রধান রাজনৈতিক দলের নামই এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেল। কেননা ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শুধু কংগ্রেসই নয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপিও (ভারতীয় জনতা পার্টি) সরকার পরিচালনা করেছে।
রায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মাল লোধা বলেন, ‘কয়লা খনির ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত স্ক্রিনিং কমিটির মোট ৩৬টি সভার সিদ্ধান্তক্রমে কয়লাখনির যতগুলো ব্লক বণ্টন (১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত) হয়েছে, সবই অবৈধ।’ রায়ে বলা হয়, ব্লক বণ্টনে যেমন কোনো স্বচ্ছতা নেই তেমনি এসব ব্লক বণ্টনে কোনো নির্দেশনাও মানা হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটিতেই ‘আইনি বিধিনিষেধ’ মানা হয়নি। এক্ষেত্রে জনগণের সম্পদ এবং জনস্বার্থ দুটিই মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। কয়লা খনি বণ্টনে অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসা আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ভারতের জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে শতকোটি ডলারের একেকটি কয়লাখনি স্বল্পদামে বিকিয়ে দিয়েছেন। কয়লাক্ষেত্র বণ্টন সংক্রান্ত ২০১২ সালের এক প্রতিবেদনে দেশটির মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) বলেছিলেন, এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কোম্পানিগুলোই কেবল লাভবান হয়েছে। সস্তায় কয়লাখনি বিলিয়ে দেওয়ার কারণে ভারতের ২১ হাজার কোটি ডলার লোকসান হয়েছে। বণ্টন করা এসব কয়লা ব্লকের অনেকগুলো এখনও নিষ্ক্রিয় পড়ে আছে। তবে অনেকগুলোতে পুরোদমে কাজ চলছে। এরই মধ্যে গতকাল আদালত বলেছেন, বরাদ্দ করা ২১৮টি লাইসেন্স বাতিল করা হবে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এসব কয়লা ব্লকের অনেকগুলোই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিগত ইউপিএ-২ সরকারের আমলে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ‘কোলগেট’খ্যাত এ কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ্য হওয়ার পর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ওই সরকারকে ব্যাপক নাকাল হতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই এসব ব্লক বিলিবণ্টন করায় তখনকার প্রধান বিরোধী দল বিজেপিসহ অন্যান্য দলের নেতারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দেশ লুটপাটের’ অভিযোগ এনেছিল। মনোমোহন সিং ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কংগ্রেস সরকারের কয়লাসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি কয়লা খনি বণ্টনে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে আসছেন।
ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ জ্বালানির চাহিদা মেটায় কয়লা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কয়লার মজুদ রয়েছে দেশটিতে। আদালতের এ রায়ের ফলে কয়লা খনি বণ্টনে নতুন সংকট যেমন সৃষ্টি হলো, তেমনি দেশটির জ্বালানি খাত আরেক দফা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ল।