বিদ্যুৎ জ্বালানিতে ১১ হাজার ৫৪০ কোটি বরাদ্দ

বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে আগামী অর্থ বছরের জন্য ১১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বা মোট বাজেটের চার দশমিক ৬১ শতাংশ। এরমধ্যে বিদ্যুৎখাতে নয় হাজার ২৮৪ কোটি এবং জ্বালানি খাতে দুই হাজার ২২৩ কোটি টাকা। এবার পরিমানে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে মোট বাজেটের তুলনায় এবার কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আ¦ব্দু মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জন্য এই বরাদ্দ প্রস্তাব করেন।
বিদ্যুৎখাতে মোট বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই উন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে। মোট বরাদ্দের মধ্যে নয় হাজার ২৭৩ কোটি উন্নয়ন এবং ১১ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে। জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দের দুই হাজার ২২৩ কোটি টাকা উল্পæয়ন খাতে এবং ৩৩ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। যা এবারের চেয়ে ১৮৯ কোটি টাকা কম।
লোকসান
বিদ্যুৎ খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রির জন্য এই লোকসান হবে বলে বলা হয়েছে। উৎপান খরচ ও গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির মধ্যে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে এক টাকা ৫০ পয়সা লোকসান হচ্ছে। এর কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসান হবে ছয় হাজার কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ছয় হাজার ৩৫০ কোটি এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল।
পরিকল্পনা
২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ ঠিক করা হয়েছিল। সে লক্ষ বাড়িয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে যে সব কাজ করা হবে তার একটি তালিকা বাজেট বক্তৃতায় উপস্থাপন করা হয়। বলা হয়, অভ্যান্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, ভ’টান ও নেপালের সঙ্গে দ্বিপাকিক্ষ, ত্রিপাকিক্ষ ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ২০১৭ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন মতা ১৮ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট করা হবে। বর্তমানে প্রায় ৭৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। ২০১৭ সাল এর মধ্যে এক হাজার ৪২৬ মেগাওয়াট মতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। রূপপুর এ দুই হাজার মেগাওয়াট মতার দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। ২০১৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি বিশেষ তহবিল ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই তহবিলে এই বছরের বরাদ্দ নিয়ে মোট ৪০০ কোটি টাকার কার্যত্রক্রম পরিচালনা করা যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দতা বাড়াতে ৬০ হাজারের বেশি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের যুক্তিসঙ্গত উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। দেশীয় সংস্থা বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর চেস্টা অব্যাহত থাকবে। নতুন গ্যাস ও তেলত্রেক্ষ অনুসন্ধান করা হবে।
সমুদ্র উপকূল ও গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে আন্তর্জতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ত্রেক্ষ বাড়ানো হবে। ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ মোট ২১টি কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হবে।
গ্যাসের অপচয় কমাতে উদ্যোগ, এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এজন্য মহেশখালী দ্বীপে এলএনজি টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমতা বর্তমানে ১০ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, ২০০৯ সালে যা ছিল মাত্র চার হাজার ৯৩১ মেগাওয়াট। জনগণ লোডশেডিং এর দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে এখনও সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার ফলে এবং কিছু বহু পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যকরী উৎপাদন কমে যাওয়ায় উৎপাদন মতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই দুরবস্থা থেকে আশু পরিত্রাণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দৈনিক ৮৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।