এডিপি: পরিবহনের পরেই বিদ্যুৎ জ্বালানি
নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:
আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য এক হাজার ৩২১টি প্রকল্পের বিপরীতে এ বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত নতুন এডিপির আকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অর্থ সংকটের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দের হার বেশি বাড়ানো হয়নি বলে এডিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এডিপির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।
চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা মার্চে সংশোধন করে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির কারণে কম অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলোতে ব্যয় কমেছে। বাস্তবায়ন কম হওয়ায় গত মার্চে এডিপির আকার ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছিল সরকার।
নতুন এডিপিতে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের জন্য আরও প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
এর বাইরে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশন প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় করবে। তাতে সার্বিকভাবে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে প্রতি তিন মাস পরপর প্রকল্প মূল্যায়ন করে দেখতে। এখন থেকে তিন মাস পরপর মূল্যায়ন করে দেখা হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে নিয়োজিত করার। এখন থেকে তাদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পদায়ন করতে সচিবদের নিদের্শনা দেওয়া হবে।
নতুন এডিপিতে মোট ব্যয়ের মধ্যে অভন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এডিপির অবশিষ্ট ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বা এক লাখ কোটি টাকার অর্থায়ন আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতেবৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়বে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
চলমান ডলার সংকটের সময়েও বিদেশি ঋণের পারিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘‘২০২৬ সালের পর এলডিসি উত্তরণ হলে আমরা স্বল্প সুদের বৈদেশিক ঋণ আর পাব না। এর আগে পর্যন্ত যতটা পারা যায় বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার করে নেওয়ার।’’
আগামী এডিপিতে গতবারের মতো এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের প্রকল্পগুলাতে, যার পরিমাণ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৬৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
নতুন এডিপিতেদ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৩৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এছাড়া শিক্ষায় ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি, গৃহায়ণে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি, স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ, কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি ৫৯ লাখ, জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে ১১ হাজার ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ছয় হাজার ৪৯২ কোটি টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চার হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অতীতের মত এবারও এডিপিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাত। যোগাযোগ ও পল্লী উন্নয়ন মিলিয়ে ৮৮ হাজার ৬৭২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
নতুন বরাদ্দে স্বাস্থ্য খাতের সেবার মানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে কি না এবং এ খাতে নৈরাজ্য বন্ধে তা ভূমিকা রাখবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘‘বরাদ্দ বাড়ানোর মূল সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। বাস্তবায়ন সক্ষমতা কম হওয়ায় অর্থ বরাদ্দ সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
‘‘শিক্ষা খাতেও বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ বেশি যাচ্ছে। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নটি করতে চায়।’’
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, আগের অর্থবছরে একই সময় যা ছিল ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সত্যজিত কর্মকার বলেন, বিষয়টি এনইসি সভায় আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পথে রয়েছে। চলতি অর্থবছর বাস্তবায়নের হার বাড়বে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।