জ্বালানি তেল সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। তেলচালিত একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন হুমকিতে পড়েছে। নৌ পরিবহন ধর্মঘটে জাহাজ থেকে তেল নামতে না পারায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে এমনিতেই পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। এছাড়া সেচসহ তেলনির্ভর শিল্প কারখানাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। তবে এই বিকল্প ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
টানা ছয়দিন নৌ ধর্মঘটে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ একাধিক স্থানের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেল পৌঁছানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার নৌ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামীকালের (আজ বুধবার) মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে তেল সরবরাহ করতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক সবাইকে মিলেই সমাধান করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ সাগরে ভেসে রয়েছে। এসব জাহাজ থেকে লাইটারেজে করে বন্দরে তেল আনার কথা। ধর্মঘটের কারণে তেল আনা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যে মজুদ তাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি জাহাজে করে তেল সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছে জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু যে সংখ্যক জাহাজ আছে তাতে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা যাবে না। এদিকে ধর্মঘটের কারণে ভৈরব-আশুগঞ্জসহ আট জেলায় জ্বালানি তেলের সংকটের খবর পাওয়া গেছে। জরুরিভাবে তেল সরবরাহের ব্যবস্থা না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
জাহাজে আসা জ্বালানি তেল ভৈরবের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই তিনটি ডিপোতে রাখা হয়। পরে ওই তেল সড়কপথে ভৈরব-আশুগঞ্জসহ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নরসিংদী জেলায় সড়কপথে এবং নদীপথে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ীসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ কমে গেছে।
পিডিবি জানায়, মোট ২ হাজার ৬৮৭ মেগাওয়াটের ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র তেলচালিত। এর মধ্যে হরিপুর ১১০, সিদ্ধিরগঞ্জ ৯৬, পাগলা ৫০ মেগাওয়াট, দোহাজারি ১১০, খুলনা ১৫০, সৈয়দপুর ২০. ভেড়ামারা ১০৫, নোয়াপাড়া ১১০, খুলনা ১০১ মেগাওয়াট তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতের জন্য বন্ধ। এরপর তেল সংকটের কারণে বাকিগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে তেল সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়েছে।
এমনিতেই প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। গতকাল দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৪৪৭ মেগাওয়াট। বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে ৭ হাজার ১৪৬ মেগাওয়াট। দেশের ১০২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট হলেও জ্বালানি সংকট ও মেরামতের কারণে প্রায় ২ হাজার ৪২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এমনিতেই কম উৎপাদন হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ও ফার্নেস তেল আমদানি করা হয় বেশি। এছাড়া কিছু অপরিশোধিত তেলও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে এখন ৯০ লাখ টন তেল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল। এরমধ্যে আবার বেশিরভাগ তেল ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ খাতে। বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ লাখ টন ডিজেল ও আড়াই লাখ টন ফার্নেস তেল আমদানি করা হয়।
বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। কর্মবিরতি আহ্বান করা সংগঠনগুলো হলো নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশন, লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে নৌ মন্ত্রণালয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।