তেল সংকটে সেচ: বিপাকে কৃষক

কৃষি সেচ কাজে তেল সংকট শুরু হয়েছে। তেলের যথেষ্ট মজুদ থাকলেও অবরোধের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে যথাযথভাবে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। চলছে বোরো মৌসুম। ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষক। তেলের অভাবে কৃষি কাজে দিতে পারছে না সেচ। তেল পরিবহনের সময় পুলিশের পাশাপশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি পাহারার পরও শঙ্কা কাটছে না।
এদিকে রেলওয়ে ওয়াগনে করে তেল পরিবহন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রেলওয়ে ও বিপিসি যৌথভাবে এই সিন্ধান্ত নিয়েছে। সঙ্কট উত্তরণে এরই মধ্যে দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলে প্রতিদিন পেট্রলের চাহিদা তিন লাখ লিটার এবং ডিজেলের চাহিদা ২২ লাখ লিটার। কিন্তু এখন বাঘাবাড়ী ডিপোর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা বিপণন কেন্দ্র থেকে পেট্রল ১৫ হাজার লিটার এবং ডিজেল দেড় লাখ লিটার সরবরাহ হচ্ছে।
অবরোধে পরিবহন কম চলছে। সে জন্য পরিবহনে কম তেল লাগছে। তেলের সরবরাহ যথাযথ না থাকায় কৃষি কাজে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা চট্টগ্রাম ও সিলেটে গ্যাস থাকলেও অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে তেল সংকট শুরু হয়েছে। উত্তর জনপদের ১৬ জেলার প্রায় ৪০০ তেলের পাম্প আছে। নিরাপত্তা বাড়িয়ে কিছু পাম্পে তেল সরবরাহ করা হলেও বেশিরভাগই বন্ধ। তেল থাকলেও অনেক পাম্পে অবরোধের কারণে স¤ক্সহৃর্ণ বল্পব্দ রাখা হয়েছে। ফলে দহৃর থেকে পরিবহনের সাময়িক তেল জোগাড় করা গেলেও কৃষি সেচ কাজে তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’র উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, পাম্পে তেল নিতে ডিলাররা অসুবিধায় পড়ছেন। তেলের যথেষ্ট মজুদ আছে। তবু  গ্রাহকের কাছে পৌছানো সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা উত্তরণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রেলওয়ে ওয়াগন বাড়ানো হচ্ছে। নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
অবরোধে তেল না পেয়ে কৃষক পড়েছেন মহাবিপাকে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলের বোরো চাষ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ঠদের। এই সুযোগে অসৎ কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও অবরোধে পরিবহন চলাচল কম। সেজন্য তেলের চাহিদাও কম। তবু যে চাহিদা তাই মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপরে। মজুদ থাকা তেলে এ কয়দিন চললেও গত দুই এক দিন সংকট তৈরী হয়েছে।
সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের ডিপোতে প্রয়োজনীয় তেল মজুদ আছে। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে বেশিরভাগ এলাকায় তেল পৌছানো যাচ্ছে না। তবুও গত কয়েকদিন পুলিশ পাহারায় ¯েদ্বশনগুলোতে তেল পৌছানো হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বিপিসি সূত্র দাবি করেছে।
পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি নাজমুল হক বলেন,  পরিবহন চলছে না বলে তেলে বিক্রিও কমে গেছে। একই সাথে নিরাপত্তার কারণে তেলের লরি বের করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহাসড়কে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসার আহবান জানান।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার কৃষক সেলিম রেজা জানান, হরতাল ও অবরোধের নামে কয়েকদিন আগে তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। কৃষক স্বপন চন্দ্র দাস জানান, ইরি বোরো মৌসুমের প্রধান উপকরন সেচ। আর সেই সেচ দিতে প্রয়োজন হয় জ্বালানী তেলের। যদি এই অবস্থায় হরতাল-অবরোধ চলতে থাকে তাহলে তেলের মহৃল্য বেড়ে যেতে পারে। গত বছরও এই অজুহাতে বেশি মহৃল্য দিয়ে তেল কিনতে হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবাল্পব্দা জেলায় বিপিসি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানীর ‘পার্বতীপুর রেলহেড পিওএল ডিপো’ থেকে জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়। অবরোধের কারণে নাশকতার আশঙ্কায় জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ডিলাররা পার্বতীপুর রেলহেড ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উঠানো বন্ধ রাখে। এ অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপরে নির্দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে গন্তব্যস্থলে তেলবাহী লরি পৌছে দেয়ার আশ্বস দিলে ডিলাররা তেল উত্তোলনে সম্মত হয়।
পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলম জানান, আটটি জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহের কারনে সার্বনিক পুলিশ রাখা হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহেনুল ইসলাম জানান, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
পার্বতীপুর ডিপোতে দায়িত্বরত ম্যানেজার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ডিজেল মজুদ আছে প্রায় এক কোটি চার লাখ লিটার ও পেট্রোলের প্রায় ৯৩ হাজার লিটার।
উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলায় কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা ডিজেলের হিসাব সংরণ করে পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইলিয়াস ফারুক জানান, এ পর্যন্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোতে এক কোটি তিন লাখ ৯৪ হাজার ৯৩২ লিটার ডিজেল মজুদ আছে। পাশাপাশি আটটি জেলার ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৯৯ হাজার ২১৩ লিটার ডিজেল তেল মজুদ আছে।
অবরোধের কারণে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে শাহজাদপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় পরিবহন সঙ্কটে সার ও তেল সরবরাহ হচ্ছে পুলিশ ও বিজিবির পাহারায়। সিলেটে পুলিশি পাহারায় আনা হচ্ছে জ্বালানি তবু চাহিদা পুরণ হচ্ছে না। খুলনাসহ দেশের দণক্ষণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫ জেলায় তেলের সঙ্কট চলছে।