জ্বালানিনীতি এখনও ব্যক্তি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি

বিশেষ সাক্ষাৎকার: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । ছবি: এনার্জি বাংলা

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রফিকুল বাসার:

জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানোর যৌক্তিকতা আর কেন এই পরিস্থিতি তার ব্যাখ্যা করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। যখন মানুষের সহায়তার প্রয়োজন তখন খরচের বোঁঝা চাপানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হল, এক লাফে অনেক বাড়ানো হল। এক সাথে এতটা বাড়ানো খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল বলে মনে করেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এটা অনভিপ্রেত। অবিবেচিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার নয় বাংলাদেশের আর্থিকখাতে দুর্বলতার প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের দেশের জিডিপি বেড়েছে কিন্তু সেই ভাবে কর আহরণ করতে পারিনি। যেহেতু কর আহরণ হয়নি তাই দুর্যোগের সময় সরকারি ব্যয় করার ক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে। ফলে এখন, যখন প্রয়োজন ছিল আরও ভর্তুকি দেয়ার, রাজস্ব উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করে ভর্তুকি দেয়ার, সেটা না পারাটা মূল কাঠামোগত ব্যর্থতা। বিশ্বে দাম বেড়েছে এটা একটা খোঁড়া যুক্তি হিসেবে এখানে এসেছে।
আর যদি কেউ বলে এটা আইএমএফ এর ঋণ পাওয়ার পূর্ব শর্ত হিসেবে বাস্তবায়ন হয়েছে তাহলে ওটা খুব গøানিকর ও লজ্জাজনক হবে। তার অর্থ এই হবে যে, আমরা আমাদের নিজস্ব নীতি সংস্কার করার ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছি। এবং নিজস্ব প্রয়োজন মত, নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী, নিজের স্থানিক বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে নীতি প্রণয়ন করতে পারিনা। সেজন্য দ্বিতীয়টা নামতে অস্বস্তি বোধ করি।

সরকারের যখন অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়নে টাকার প্রয়োজন হচ্ছে তখনই বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়িয়ে টাকা নেয়া হচ্ছে। উচ্চহারে করারোপ করা হয়েছে জ্বালানি তেল আমদানিতে। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: কর আদায় করতে চায়, বছরের বাজেট তৈরি করতে চায়, সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্র – নিশ্চিত ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়। এই নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সে বিভিন্ন আমদানি পণ্য এবং সর্বাপেক্ষা বড় ধরনের আমদানি পণ্য যেটার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে সেই পণ্যে উৎসে কর ব্যবহার করে। এবং সেটা বহু ধরনের কর ব্যবহার করা হয়। এটা আমদানি শুল্ক থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ ভ্যাট এবং অন্যান্য সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা তো একটা পরিহাসের বিষয় হয়ে গেছে। ৬/৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়। প্রবৃদ্ধি মানেই মানুষের আয় বাড়ে। সেই আয়ের প্রতিফলন আমরা কোন বিনিয়োগে দেখিনা, করের ক্ষেত্রেও দেখি না।

বিভিন্ন দেশে যেটা দেখা গেছে, যখন বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ে তখন শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারত। ভারতে দাম বেশি ছিল। কিন্তু সা¤প্রতিককালে সেখানে দামের সমন্বয় করা হয়েছে। আর সমন্বয়টা হল, সরকার করে ছাড় দিয়েছ। কেন্দ্রীয়ভাবে ছাড় দিয়েছে। কোন রাজ্যের ছাড় নয়। ফলে জনগণের উপর থেকে চাপ সরিয়ে নিয়েছে। করের যে ছাড় দিল এজন্য যে ব্যয় হবে তা তারা অন্য খাত থেকে উপার্জন করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা তো একটা পরিহাসের বিষয় হয়ে গেছে। ৬/৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়। প্রবৃদ্ধি মানেই মানুষের আয় বাড়ে। সেই আয়ের প্রতিফলন আমরা কোন বিনিয়োগে দেখিনা, করের ক্ষেত্রেও দেখি না। উপরন্তু আমরা যেটা করি, কালো টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ দেয়। এমনকি বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছে তাদের টাকা ফেরত আনার জন্য উৎসাহ দেয়। কিন্তু যারা সৎভাবে দেশে কর দিচ্ছে তাদের জন্য কোন সুবিধা দিচ্ছি না। এবার বাজেটে কর যোগ্য সীমা বাড়ানো হয়নি। এবং মূল্যস্ফীতির জন্য মধ্যবিত্তরা নানা সমস্যার মধ্যে আছে।

মূল্যস্ফীতির মধ্যে তেলের দাম বাড়ানোটা তো নিশ্চয় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এই মূল্যস্ফীতির সময়ে এই তেলের দাম বাড়ানো বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাব ধাপে ধাপে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হবে। এটার ধাক্কাটা সবচেয়ে কম লাগবে উচ্চবিত্তদের। উচ্চবিত্তরা ডলার ইকোনমিতে চলে থাকে। আর
একটি শ্রেণির মধ্যে যারা বৈদেশিক মুদ্রার উপর জীবিকা নির্বাহ করে। যাদের রেমিটেন্সে আয় আছে তাদের কোন সমস্যা হবে না। আর সমস্যা হবে না সবচেয়ে যারা গরিব মানুষ। যারা বাজার ব্যবস্থাপনা থেকে মজুরি নেয়। অর্থাৎ দিনমজুর হিসেবে যারা কাজ করে। তারা জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে তার মজুরিকে সমন্বয় করতে পারে। কিন্তু নিন্মবিত্ত, নিম্মমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত
ও সীমিত আয়ের বেতনভোগী কর্মচারী যারা, তাদের হবে সবচেয়ে কষ্টের। বাংলাদেশের মানব সম্পদের সবচেয়ে প্রতিশ্রæতিশীল অংশটাই এরা। এদের মধ্যে যুবক শ্রেণি অনেক। এদের প্রতি সবচেয়ে অবিচার করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড, তৌফক ই ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আমাদের বিকল্প ছিল না। ভর্তুকি দেয়ার একটা সীমা আছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি এই কথার সাথে সম্পূর্ণভাবে অমত। কারণ হল, একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। পিতামাতাকে হত্যা করার দায়ে একজনকে বিচার করার জন্য তার বিচারকের কাছে নিয়ে এসেছে। বিচারক যখন তার পিতামাতাকে হত্যা করার জন্য মৃত্যুদÐ দিচ্ছে তখন সে বলছে, বিচারক মহোদয় আমাকে এই ধরনের বড় শাস্তি দেবেন না। কারণ আমি একজন এতিম। আমার প্রাণ ভিক্ষা দিন। তো আপনি আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসে যদি বলেন – আমার কোন বিকল্প নেই, তাহলে তো হবে না। কারণ বিকল্পহীনতার এই পরিস্থিতি নিজেই সৃষ্টি করে নিয়ে এসেছেন। আপনি ভুলনীতির ভিত্তিতে বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে টাকাগুলো অন্য জায়গাতে নিয়ে গেছেন। এলএনজির মত উচ্চমূল্যের আমদানির উপর নির্ভর হয়েছেন। আপনারাই বাপেক্সকে টাকা না দিয়ে খনন করতে দেননি। মিয়ানমারের কাছ থেকে সীমানা জয়লাভ করার পরও সমুদ্রে সেরকমভাবে গ্যাস খুঁজি নাই। তাহলে এই যে বিকল্পহীনতার বর্তমান পরিস্থিতি, এটা সৃষ্টি হল কেন? হয়েছে আমার আগে যে বিকল্পগুলো ছিল সেগুলো অবহেলা করার জন্য। আপনি অবহেলা করেছেন, অবজ্ঞা করেছেন। আপনি নিজে পিতা-মাতাকে হত্যা করে এসে এতিমের কথা বলে ক্রন্দন করবেন এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়।

যখন বিকল্প ছিল তখন সেই পর্বটা, সেই পর্যায়টা পার করে এসেছি। কাজে লাগানো হয়নি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: যখন বিকল্প ছিল, যখন পরামর্শ দেয়া হয়েছে, স্বাধীন মতামত দেয়া হয়েছে, তখন তা অবজ্ঞা অবহেলা করা হয়েছে। এবং একটা অস্বীকারের মনোভাবের মধ্যদিয়ে গেছে। আজকের এই পরিস্থিতির হল অন্যান্য মতামতের প্রতি অবহেলা করা। অবহেলা করার কারণে আজকে এই রকম অন্ধ গলিতে গিয়ে এসে উপনিত হয়েছে। সেই অর্থে এর সবচেয়ে বেশি ফলাফল ভোগি হচ্ছে একটি সরকার। যে কিনা আগামীবছর নির্বাচনে যাচ্ছে।

মানে আপনি বলতে চাইছেন যে এই সিদ্ধন্ত নেয়ার ফলে সরকার রাজনৈতিকভাবেও পিছিয়ে থাকবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: যেই কারিগরি সিদ্ধান্তগুলোর ফলাফল এখানে এসেছে, তৎকালীন রাজনৈতিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, বিশেষ গোষ্ঠীকে লাভবান করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার সাথে উন্নয়নের যে আলেখ্য, যে গল্পটিকে আমরা যুক্ত করেছিলাম, সেটির সারবত্তা যে অনেকক্ষেত্রে ভেঙে গেছে সেটি আজকে প্রমাণিত হচ্ছে। এখন ঐটাও এমন সময় প্রমাণিত হচ্ছে, যখন তার সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের গত এক দশকের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করা এবং এটার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা দেয়া। এখন পেছন ফিরে দেখতে হবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে; ওনাদের এই বিকল্পহীন অবস্থায় কে নিয়ে আসল?

রাজনীতিবিদদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: তাদের বুঝতে হবে এই অবস্থার সৃষ্টি হল কী করে? নির্বাচনের আগের বছর এসে জিনিসপত্রের এই দাম। একটা প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলাফল তো কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

প্রায় দুই দশক আগে গ্যাস ব্যবহার নির্ধারণ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের এক কমিটির সদস্য ছিলেন। সে সময় গ্যাস রপ্তানি ঠেকাতে আপনি অবদান রেখেছেন। সে সময় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত গ্যাস রপ্তানি করা যাবে না বলেছেন। এখন এই সময় এসে আপনার কী মনে হয় এখনও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটি স্বাধীন জ্বালানি নীতি তৈরি করার জন্য যে সমস্ত উপাদান লাগে আমাদের দেশে সেগুলো বিদ্যমান থাকার পরও বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থের কারণে এটা পারিনি। স্বাধীন জ্বালানি নীতির বিষয় হবে, একদিকে জ্বালানির উৎসে বহুধাকরণ করব। একটি জ্বালানির উপর এককভাবে নির্ভরশীল থাকব না। তা সে কয়লা হোক গ্যাস হোক বা তরল জ্বালানি হোক বা অন্য কোন কিছু। আবার অপর দিকে মনে রাখতে হবে নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সে জ্বালানি যে শুধু লভ্য হবে তা না এটাকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সেই সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে এটা রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় তো জ্বালানির বাজার আন্তর্জাতিকভাবে এমন একটা উঠা নামার ভেতর দিয়ে যায়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন যতটা জটিল তাতে এক ধরণের নিশ্চয়তা মধ্য মেয়াদে পেতে হবে। যাতে দেশের মধ্যে বা ব্যক্তি পর্যায়ে নিশ্চয়তা পেতে পারে। এক্ষেত্রে বহুধাকরণের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সাশ্রয় করাটা গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যমেয়াদে নিশ্চয়তা থাকাটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ। এরসাথে সবচেয়ে বড় যেটা সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে সেটা হল, পরিবেশ বান্ধব জ্বালানিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাটা দেখা দিচ্ছে। সেটা করার ক্ষেত্রেও আমাদের বিভিন্ন নীতি বিকল্প রয়েছে। দুঃখের বিষয়টা যেটা হয়েছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জ্বালানি খাতে একটি বড় ধরণের ব্যবসায়ীক বা আমদানি গোষ্ঠী খুবই বড় ধরণের রাজনৈতিক প্রভাব রাখার ক্ষমতা রাখে। এবং এই রাজনৈতিক প্রভাব এই গোষ্ঠীর আছে দেখে, শুধু গোষ্ঠী না; নাম করা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এসবের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে। শেষ বিচারে আমাদের রাজনৈতিক সরকার এদের কাছে পর্যদস্তু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দায় দায়িত্বটা কিন্তু এই সরকারের কাঁধেই পড়ে যাচ্ছে। আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে সবুজ জ্বালানিই আমাদের বিকল্প।

পরিবেশ বান্ধব জ্বালানিই আমাদের বিকল্প বলছেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমাদের বহুধাকরণ করতে হবে। সাশ্রয়ী হতে হবে। মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এবং এরসাথে পরিবেশ বান্ধবের দিকে যেতে হবে। এইসবের মধ্যে এই মুহুর্তে জ্বালানিনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে ধরণের ব্যবসায়ীক প্রভাব আছে, গোষ্টীর প্রভাব আছে, বিশেষ প্রতিষ্ঠানের প্রভাব আছে, সেইগুলো থেকে যদি রাজনৈতিকভাবে মুক্ত হতে না পারে এর ফলাফল রাজনীতিবিদদেরই ভোগ করতে হবে। এবং এটা আগামী বছর আরও প্রকট হবে।

এই যে জ্বালানির দামের উঠা না। আর না পাওয়ার অনিশ্চয়তা। দুটো জিনিস, একটা হচ্ছে দামের অনিশ্চয়তা আর একটা হচ্ছে পাওয়ার অনিশ্চয়তা। এই দুই অনিশ্চয়তায় আমাদের অর্থনীতিতে কী ধরণের প্রভাব ফেলছে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: যে কোন দেশের ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য যে কয়কটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে তারক্ষেত্রে জ্বালানির নিরাপত্তা, জ্বালানির নিশ্চয়তা, সাশ্রয়ী মূল্যে তা পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে যে স্থ’বিরতা লক্ষ্য করছি, জিডিপির অংশ হিসেবে, এই বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর একটা কারণ অনেকেই বলে যে, সুদের হার বেশি। আসলে যদি গবেষণায় দেখেন তাহলে দেখবেন, এখানে অনেকক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্যটা অনেক প্রভাব ফেলছে, ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের আগামী দিনের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যদি আসি তাহলে আমাদের এই রকম একটা অবস্থা থেকে বের হতে হবে; যেখানে ২০ হাজার মেগাওয়াটের মত উৎপাদন ক্ষমতা আছে। কিন্তু ১০ হাজার মেগাওয়াটও ব্যবহার করতে পারি না। এই যে বৈপরিত্য, এই বৈপরিত্য থেকে বের হতে পারলেই বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে নিশ্চয়তা দরকার, সেটা করা সম্ভব। আর এর জন্য বারবার যেটা বলছি, বহুধাকরণ করা দরকার। কয়লাকে ক্রমান্বয়ে বের করে দিতে হবে। তারমনে এই নয় যে, এই মুহূর্তে কয়লা থেকে আমরা বের হয়ে যাব। দেশে গ্যাস কমে আসছে এটা যেমন ঠিক আবার অপ্রকাশিত গ্যাস তো বঙ্গপোসগারে রয়েছে। মিয়ানমারের সাথে সীমানা অর্জন করেছি। সেখানে তো কোন অনুসন্ধান করিনি। সেখানে বৈশ্বিক বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। সেটাও করিনি। যে পরিস্থিতি হয়েছে বাংলাদেশের সেটা কোন বৈশ্বিক কারণে নয়। আমাদের নিজেদের দিকে তাকাতে হবে। আমরা কেন পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলাম না। সেটার একটা বড় কারণ বলে আমি মনে করি, বাংলাদেশের জ্বালানি নীতি এখনও একটা ব্যক্তি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি।

ধন্যবাদ আপনাকে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আপনাকেও ধন্যবাদ।