জামালগঞ্জ কয়লাখনি থেকে মিথেন অনুসন্ধানে সমীক্ষা শুরু

জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লা খনি থেকে মিথেন গ্যাস উত্তোলনে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে। কয়লার স্তরে স্তরে যে গ্যাস আছে তা তুলে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা হবে। এজন্য আপাতত তিনটি কূপ খনন করা হবে। প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে কয়লাখনিতে সমীক্ষা শুরু করলো বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর দি এক্সট্রাকশন অব কোল বেড মিথেন (সিবিএম) এ্যাট জামালগঞ্জ কোল ফিল্ড’ নামক প্রকল্পের অধীনে ওই খনিতে ৩টি কূপ খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় সংসদ সদস্য এ্যাড. সামসুল আলম দুদু, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক মো. আখতারুজ্জামানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের মাইনিং অ্যাসোসিয়েটস প্রাইভেট লিমিটেডকে কূপ খনন করার কাজ দেয়া হয়েছে। এজন্য গতবছরের ২১ জুন তাদের সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। কোম্পানিটি কয়লার নমুনা সংগ্রহ, কয়লা স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি এবং গ্যাসের পরিমান নির্ধারনের সমীক্ষা করবে। মাটির নিচে প্রায় তিন হাজার ৩০০ ফুট পর্যন্ত প্রতিটি কূপ খনন করা হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। নমুনা ভারতে পরীক্ষা করা হবে। তবে সব তথ্য পেট্রোবাংলাকে পরে দিয়ে দেয়া হবে।
পেট্রোবাংলার নিজস্ব অর্থে এই কূপ খনন করা হচ্ছে। এতে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। কূপ খনন করতে ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বাকি টাকা জমি ইজারা, ইজারা নেয়া জমির ফসলের ক্ষতিপূরণসহ অন্য কাজে লাগানো হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নসরুল হামিদ বলেন, সব সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে। রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুযায়িই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ও যাবে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বিকল্প জ্বালানির উৎসের প্রাপ্যতা দ্রুত নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য সরকার এলএনজি, এলপিজি, কয়লাসহ জ্বালানির নানা উৎসের সন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, একেকটি কূপের কাজ শেষ হতে প্রায় ৪০ দিন লেগে যাবে। সবমিলিয়ে ১২০ দিনের কিছু বেশি সময় লাগবে। এরপর গ্যাসের সরবরাহ পরীক্ষা করার জন্য আরো দুটি কূপ খনন করা হবে। এসব পরীক্ষা থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জানাবে, এই খনির গ্যাস উত্তোলন যোগ্য কিনা।
জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের এক জরিপে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রায় ১১৫ কোটি মেট্রিকটন কয়লা এখানে মজুদ আছে। ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ খনির অবস্থান। এতে এক হাজার ৯২০ ফুট থেকে তিন হাজার ৪৭৪ ফুট গভীর পর্যন্ত কয়লা মজুদ আছে। এ খনির কয়লা মাটির অনেক গভীরে থাকায় তা উন্মুক্ত বা সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে তোলা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় হাইড্রোকার্বন ইউনিট ভারতীয় পরামর্শক সংস্থা মেসার্স প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে জরিপ করে। জরিপ শেষে কোম্পানিটি জানায়, এ খনিতে কোল বেড মিথেন (সিবিএম) অথবা আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন (ইউসিজি) পদ্ধতিতে যেতে হবে। সিবিএম মানে কয়লার স্তরে স্তরে জমে থাকা গ্যাস তোলা। আর ইউসিজি হচ্ছে কয়লাকে পুড়িয়ে গ্যাস বানিয়ে তোলা। ইউসিজি বিশ্বের কোথাও এখনো ব্যবহার করা হয়নি। তাদের সুপারিশেই সিবিএম পদ্ধতিতে গ্যাস তোলার সমীক্ষা শুরু হলো।