কয়লা তোলা হবে না, আবাসিকে গ্যাস নয়

খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশের কয়লা এখনই আর তোলা হবে না। আমদানি করা কয়লা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এদিকে নতুন করে আর আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। তবে বিশেষায়িত শিল্প এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অফিস করার সময় তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এসব নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পর্যায়ক্রমে সমন্বয়ের কথাও বলেন।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে নতুন করে আর আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। এজন্য আগামী তিন বছরের জন্য এলপিজি সহজলভ্য করে সবার ঘরে পৌছে দেয়া হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাপেক্স এর এলাকা বাদ দিয়ে স্থলভাগের অন্য এলাকায় বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে জরিপ করার পাশাপাশি তেল গ্যাস উত্তোলন অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া তিন বছরের মধ্যে ৮০ ভাগ এলাকায় প্রিপেইড মিটার চালু, অনলাইনে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা, দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নেয়া, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ, গ্রিড লাইন আপগ্রেড করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইস্টার্ন রিফাইনারীর ক্ষমতা দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন। তেল পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল এবং গোদনাইল থেকে শাহজালাল বিমান বন্দর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের নির্দেশ দেন তিনি। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে বলে বিপিসি জানায়। এছাড়া কক্সবাজারে একটি জেট ফুয়েলের ডিপো করা এবং আন্তর্জাতিক
বাজারদর অনুযায়ি জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, ডিজিটাল অডিট, এনার্জি অডিট, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিনিময়ে সহায়তা বৃদ্ধির কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এসব প্রকল্প সরকারের বাকী মেয়াদে অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নেরও তাগিদ দেন।
প্রতি মাসে এক লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য কমপক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া। বাকী ১০ শতাংশ মানুষ যারা গ্রিড লাইনের বাইরে বাস করেন তাদের জন্য তিনি সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থার কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কার্যত্রক্রম উপস্থাপন করা হয়। বলা হয়, পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ঘাটতি, কয়লা সরবরাহের অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ লক্ষ পূরণে বাঁধা। ২০২১ পর্যন্ত ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। বলা হয়, গত এক বছরে ৭৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৫৬ মেগাওয়াট।  গত এক বছরে ২৫৫ কিলোমিটার সঞ্চালন ও ২২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।  এ সময়ে গ্রাহক বেড়েছে ১৬ লাখ । মাথাপিছু বিদ্যুৎ ভোগের পরিমাণ ৩৭২  কিলোওয়াট/ঘণ্টা হয়েছে। ১৩ টি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়নো হয়েছে। যা থেকে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ৬৬ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ৯ ফেব্র“য়ারি প্রধানমন্ত্রী জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে নিজ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। সে সময় তিনি যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।